একাডেমিক চাপে মানসিক সমস্যার সম্মুখীন দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী

করোনা পরবর্তী একাডেমিক চাপের কারণে ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। সামগ্রিকভাবে এই সংখ্যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। শিক্ষার্থীদের এসব মানসিক সমস্যার পেছনে আছে দীর্ঘ বিরতির ফলে তৈরি হওয়া সেশনজট, পড়াশোনায় অনীহা, পরীক্ষার ফল নিয়ে হতাশা, পড়া বুঝতে না পারার মতো কারণ।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের 'মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা' শীর্ষক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ শনিবার ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এসব তথ্য তুলে ধরে।

শিক্ষার্থীদের ওপর একাডেমিক চাপ তাদের আত্মহত্যার পেছনে কতটুকু দায়ী এবং এরসঙ্গে অন্যান্য কী কী কারণ জড়িত তা বের করার লক্ষ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ৯ মাসে শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন ৪০৪ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭ জন, স্কুলের ২১৯ জন, মাদ্রাসার ৪৪ জন, কলেজশিক্ষার্থী ৮৪ জন। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ২৪২ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬২ জন।

পড়াশোনাকেন্দ্রিক চাপের ধরন জানতে চাইলে জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, করোনার আগের তুলনায় পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমে গেছে তাদের। ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাদের ঘন ঘন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে তারা খাপ খাওয়াতে পারছেন না। পরীক্ষার সময়ের চেয়ে সিলেবাসের আধিক্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর।

২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, স্বল্প সময়ে বড় কোর্স শেষ করার ফলে তারা পড়া বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ জানান, পড়াশোনার চাপের জন্য তারা পরিবারকে সময় দিতে পারছেন না, যা তাদের মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জরিপে মানসিক সুস্থতা বিষয়ক বেশ কয়েকটি নিয়ামক নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হলে উত্তরে উঠে আসে উদ্বেগজনক কিছু তথ্য। মোট অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগ তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। এর পাশাপাশি দৈনন্দিন আচার-আচরণ ও ব্যবহারে পরিবর্তন, যেমন মন খারাপ হওয়া, হঠাৎ ক্লান্তি আসা ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষাজীবনে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন ৮০ দশমিক ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।

ডিজিটাল ডিভাইস যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপের ওপর অতিরিক্ত আসক্তি ও নির্ভরতা শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন ৭০ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। আবার মানসিক সমস্যাজনিত কারণে তাদের নিত্যদিনের ঘুমের অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। যেমন অতিরিক্ত ঘুম অথবা নিদ্রাহীনতা তৈরি হয়েছে। এতে ৭১ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন ধাপে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এ জরিপটিতে ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ১ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধরন বিবেচনায় জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের, ২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের, ২ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

জরিপটিতে অংশগ্রহণকারী মোট শিক্ষার্থীর মাঝে পুরুষ শিক্ষার্থী ও নারী শিক্ষার্থী যথাক্রমে ৪৩ দশমিক ৯ এবং ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৯ দশমিক ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষের। দ্বিতীয় বর্ষের ২৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ, তৃতীয় বর্ষের ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং চতুর্থ বর্ষের ১৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন।

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক (অব) ড. মো. মাহমুদুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ। জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল ওহাব।

 

Comments

The Daily Star  | English

Killing of trader in old Dhaka: Protests erupt on campuses

Protests were held on campuses and in some districts last night demanding swift trial and exemplary punishment for those involved in the brutal murder of Lal Chand, alias Sohag, in Old Dhaka’s Mitford area.

4h ago