পাবনার বাউনজান সেতুতে লোহার বেষ্টনী, ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন

বাউনজান সেতুতে লোহার বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। ছবি: স্টার

গতি কমিয়ে চলনবিলের বাউনজান সেতু পার করছে রেলের পশ্চিম জোনের সব ট্রেন। সংস্কারকাজ বন্ধ থাকায় ঢাকার সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে চলছে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের রেল যোগাযোগ।

ঢাকার সঙ্গে রেলের পশ্চিম বিভাগের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের একমাত্র পথ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রেললাইন।

রেলের প্রায় অর্ধেক যাত্রী প্রতিদিন এ পথ দিয়ে যাতায়াত করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ পথে পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার চলনবিলের ওপর স্থাপিত বাউনজান রেল সেতুটি উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ট্রেন যাত্রীদের কাছে এখন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় শত বছরের পুরনো এই সেতুর পিলারের বেশিরভাগ স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পশ্চিম রেলের গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি। ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার যাত্রী এ পথ দিয়ে যাতায়াত করছেন।

সেতুর মূল পিলারে ধস দেখা গেলেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ পথের রেল চলাচল সচল রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত পিলারের সঙ্গে লোহার বেষ্টনী তৈরি করে যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে রেল বিভাগ।

ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে রেলের পশ্চিম বিভাগের অন্তত ৩৫টি ট্রেন এ পথ দিয়ে যাতায়াত করছে।

বাউনজান সেতুতে লোহার বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। ছবি: স্টার

নদীতে পানি বাড়ায় বিলে পানির প্রবাহ বেশি। সেতুর সংস্কারকাজ গত ২ মাস বন্ধ। ১৪টি পিলারের মধ্যে ২টি পিলারে লোহার বেষ্টনীর কাজ শেষ হলেও বর্তমানে সংস্কারকাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কাজ বন্ধ থাকায় বেষ্টনীগুলো যত্রতত্র পরে থাকায় সেগুলো নষ্ট হতে দেখা গেছে।

সংস্কারকাজে নিয়োজিত ম্যাক্স আরটিসির কর্মী সাজু শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুরনো এ ব্রিজের ১৪টি পিলারের বেশিরভাগই দুর্বল। শর্ত অনুসারে সেতুর ভিত্তি থেকে পুরনো পিলারের গা ঘেঁষে লোহার বেষ্টনী দেওয়া হচ্ছে। কৃত্রিমভাবে স্থাপিত বেষ্টনীগুলো মূল পিলারকে রক্ষা করবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিলে পানি বেশি থাকায় এখন সংস্কারকাজ করা যাচ্ছে না। প্রায় ২ মাস কাজ বন্ধ। ইতোমধ্যে প্রতিটি পিলারে লোহার বেষ্টনী সংযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় বিম বাউনজান সেতু এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।'

পানি কমার পর দ্রুত কাজ শেষ করা হবে বলে জানান তিনি।

ভাঙ্গুরা রেলস্টেশন মাস্টার মো. আব্দুল মালেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর সংস্কার শেষ না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজ দিয়ে ট্রেন চলাচলে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেন যাওয়া-আসার সময় সেতুর কাছাকাছি পৌঁছালে লাল পতাকা দেখিয়ে তা থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।'

রেলের প্রকৌশল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিটি ট্রেন ৮ কিলোমিটার বেগে চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি পার করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রেলের পশ্চিম বিভাগের প্রায় ৩৫ যাত্রীবাহী ট্রেন প্রতিদিন এ রুট দিয়ে চলাচল করছে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করছেন। ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিটি ট্রেন গতি কমিয়ে সেতু পার হচ্ছে।

রেল বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতুতে গতি নিয়ন্ত্রণ করে ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নিলেও নিশ্চিত হতে পারছেন না সাধারণ যাত্রীরা।

ভাঙ্গুরা উপজেলার কলেজ শিক্ষক ও নিয়মিত ট্রেনের যাত্রী আব্দুর রহিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুরনো এ ব্রিজ দিয়ে আগে থেকেই ট্রেনে যাতায়াতে ভয় করত। কয়েকটি পিলার দুর্বল হওয়ায় এখন এ সেতু পারের সময় আরও বেশি ভয় লাগে।'

'অনেকেই ট্রেন থামালে নেমে যান। হেঁটে সেতু পার হন। ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতুতে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় যাত্রীদের ভীত থাকতে হয়,' যোগ করেন তিনি।

বাউনজান সেতুর কাছে এলে ট্রেন থামানো হয়। ছবি: স্টার

রেলের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, সেতুটি পুরনো হলেও ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি নেই। রেলওয়ে পশ্চিম জোনের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী বীরবল মণ্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্ষতিগ্রস্ত পিলারে সংস্কারের কাজ চলছে। সংস্কার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ সেতু দিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণ করে ট্রেন চলাচল করলে ঝুঁকির আশঙ্কা নেই।'

সরেজমিনে বাউনজান সেতু এলাকায় দেখা গেছে, সেতুর কাছে ট্রেন পৌঁছালে লাল পতাকা টাঙিয়ে ট্রেন থামানো হচ্ছে। ট্রেনচালক নির্ধারিত কাগজে সই করে ৮ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু পার হচ্ছেন। এতে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় লাগছে। ট্রেন চলাচলে প্রায়ই শিডিউলে হেরফের হচ্ছে।

রেলের পাকশী বিভাগের পরিবহন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগের একমাত্র পথ ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রুট। ব্যস্ততম এ পথের বাউনজান সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রতিটি ট্রেন ধীর গতিতে চালাতে হচ্ছে। অতিরিক্ত সময় লাগায় অনেক সময় পশ্চিম রেলের শিডিউলে তারতম্য হচ্ছে। রেল বিভাগ শিডিউল ঠিক রাখতে সচেষ্ট আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

18h ago