কানাডা যাচ্ছেন নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবারের আরো ১৪ সদস্য

রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবারের আরো ১৪ সদস্য কানাডার উদ্দেশ্যে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ত্যাগ করেছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে প্রথম দফায় গত বছরের ১৭ অক্টোবর মুহিবুল্লাহর পরিবারের ১১ জন সদস্যকে শরণার্থী হিসেবে কানাডায় নিয়ে যাওয়া হয়।

গত রোববার সকালে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলেও বিষয়টি অত্যন্ত গোপন রাখা হয়। তাদের কানাডা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি জানাজানি হয় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায়।

মুহিবুল্লাহর মা ও তার আপন ২ ভাইয়ের পরিবারের ১৪ সদস্য কানাডার উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পের দাপ্তরিক কার্যক্রম শেষ করে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার একটি মিনিবাস ও ২টি মাইক্রোবাস যোগে তাদের ঢাকায়  নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা থেকে তারা কানাডায় রওনা দেবেন। তারা ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে যাত্রাকালে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ও আর্মড পুলিশের  প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে একই প্রক্রিয়ায় মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার ৬ মাস পর তার পরিবারের ১১ সদস্যকে কানাডা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

৮-এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (অপস) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, 'জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মাধ্যমে মুহিবুল্লাহর মা ও ২ ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানসহ ১৪ জনকে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর তাদের কোথায় নেবে- বিষয়টি আমার জানা নেই।'

১৪ জনের দলে আছেন মুহিবুল্লাহর মা উম্মে ফজল (৬০), ছোট ভাই হাবিব উল্লাহর স্ত্রী আসমা বিবি (৩৫), সন্তান কয়কবা (১৫), বয়সারা (১৩), হুনাইসা (৯), মো. আইমন (৮), ওরদা বিবি (৫) ও মো. আশরাফ (৫) । আরেক ভাই আহমদ উল্লাহর স্ত্রী শামছুন নাহার (৩৭), সন্তান হামদাল্লাহ (১১), হান্নানা বিবি (৯), আফসার উদ্দীন (৭), সোহানা বিবি (৫) ও মেজবাহ উল্লাহ (১) ।

ক্যাম্পের প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেন, 'কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে মুহিবুল্লাহর ২ ভাইয়ের পরিবারের ১৪ সদস্যকে কানাডা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ক্যাম্প থেকে ঢাকা নিয়ে গেছেন। এই সময় পুলিশসহ জাতিসংঘের সংস্থার লোকজনও ছিলেন।'

২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উখিয়ার বৃহত্তর কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়াস্থ ক্যাম্পে নিজ কার্যালয়ে গুলিতে নিহত হন শীর্ষস্থানীয় রোহিঙ্গা নেতা আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস্-(এআরএসপিএইচ) এর প্রধান মুহিবুল্লাহ। এরপর তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্প থেকে সরিয়ে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্টে কঠোর নিরাপত্তায় রাখা হয়। একইসঙ্গে শুরু হয় তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর আলোচনা।

মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর তার পরিবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোনো দেশে (থার্ড কান্ট্রি) আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে তারা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার নাম উল্লেখ করেন। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৭ অক্টোবর মুহিবুল্লাহর স্ত্রী, সন্তানসহ ১১ জনকে কানাডায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দলে ছিলেন মুহিবুল্লাহর স্ত্রী নাসিমা খাতুন, ৯ ছেলে-মেয়ে ও এক মেয়ের জামাই। তাদের জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতায় কানাডায় 'শরণার্থী' হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়।

ক্যাম্পের এআরএসপিএইচ-এর রোহিঙ্গা নেতা মো. ইয়াছিন বলেন, 'মুহিবুল্লাহর মা ও ২ ভাইয়ের পরিবারকে ক্যাম্প থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদেরকেও কানাডায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে জেনেছি।'

তবে এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English

India curbs import of Bangladeshi jute, woven fabrics, yarn

However, the products will be allowed to be imported only through Nhava Sheva seaport in Maharashtra

1h ago