পাল্টাপাল্টি অবস্থানে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ ও চসিক মেয়রের সমর্থকরা

পাল্টাপাল্টি অবস্থানে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ ও চসিক মেয়রের সমর্থকরা
পরিষদের পূর্ব নির্ধারিত গণমিছিল নগরীর কদমতলী মোড় থেকে শুরু করে কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে কদমতলির মোড়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। ছবি: সংগৃহীত

মেয়রকে নিয়ে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতির সাম্প্রতিক এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বন্দর নগরীর রাজপথে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সমর্থক ও করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা।

আজ শুক্রবার নুরুল আবছাররের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে রাজপথে কর্মসূচি পালন করছেন চসিক মেয়রের অনুসারী ও ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী। বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেছেন তারা।

এর আগে রেজাউলের ​​অনুসারীরা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। পরিষদের আরও কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।

শুক্রবার মানববন্ধন ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও ওমর গণি এমইএস কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক। সমাবেশে সরকারি সিটি কলেজ, ওমর গণি এমইএস কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ছাত্রলীগ কর্মীরা অংশ নেন।

সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে আবছারকে গ্রেপ্তার করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। এছাড়া ভবিষ্যতে মেয়র সম্পর্কে কোনো 'অপমানজনক' মন্তব্য করলে রাজপথে প্রতিরোধ করা হবে বলে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতাদের হুঁশিয়ার করেন।

এদিকে একইদিনে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করার কথা থাকলেও মেয়র অনুসারীদের কর্মসূচির কারণে সমাবেশ করতে পারেননি করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা।

পরিষদের পূর্ব নির্ধারিত গণমিছিল নগরীর কদমতলী মোড় থেকে শুরু করে কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে কদমতলির মোড়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। যদিও মিছিলটি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আমির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের মিছিলটি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের দিকে যাচ্ছিল কিন্তু পথে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কায় পুলিশ তাদের ওই এলাকায় না যেতে অনুরোধ করে। পুলিশের অনুরোধে আমরা কদমতলী এলাকায় মিছিলটি শেষ করি।'

চসিক কর্তৃক পুনঃমূল্যায়নের কারণে হোল্ডিং ট্যাক্স বহুগুণ বৃদ্ধির অভিযোগে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছে চট্টগ্রামে করদাতাদের অধিকার রক্ষার জন্য নাগরিক প্ল্যাটফরম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়নের উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে পশ্চিম মাদারবাড়িতে পরিষদ আয়োজিত এক সভায় চসিক মেয়র সম্পর্কে আবছারের এক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে সভাপতি আবছার তার বক্তৃতায় মেয়রকে 'পুনঃমূল্যায়ন' অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের উদ্যোগ বন্ধ না করলে শহর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা শহরে বাস করি মোট ১১ ধরনের ট্যাক্স দিয়ে...আমরা আপনার (মেয়র) বাড়িতে থাকি না। যদি আপনি (মেয়র) বাজে কথা বলেন, আমরা আপনাকে শহর থেকে তাড়িয়ে দেব… আপনাকে শহর ছেড়ে যেতে হবে।'

সেদিন সভায় চসিক এর হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর উদ্যোগের প্রতিবাদে শুক্রবার শহরে গণমিছিল করার ঘোষণা দেন আবছার।

আবছার তার বক্তব্যে বলেন, 'মেয়র বলেছিলেন যে ১৯৮৬ সালে করা মূল্যায়ন অনুযায়ী আমাদের হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হবে। ১৯৮৬ সালে যে কর মূল্যায়ন করা হয়েছিল তারপরে চসিক অনেক মেয়র পেয়েছে কিন্তু তারা কেউই ঐ আইন বাস্তবায়ন করেনি। কারণ তারা চিন্তা করেছিলেন নগরবাসী বর্ধিত কর দিতে পারবে না।'

তিনি বলেন, 'যেহেতু ৩৬ বছরেও আইনটি বাস্তবায়িত হয়নি, কাজেই এখন তা বাতিল এবং অকার্যকর। আমি মেয়র নির্বাচনে আপনার (মেয়র) জন্য ভোট চাইতে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়েছি। এখন সেই লোকেরা আমাকে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছে। তারা বলেছে আমার অনুরোধে তারা আপনাকে ভোট দিয়েছে কিন্তু এখন তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। তাদের প্রশ্নের কোনো উত্তর আমার কাছে নেই। আমি তাদেরকে কোনো জবাব দিতে পারছি না।'

তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর মেয়রের একান্ত সচিব মোস্তফা কামাল চৌধুরী বাদী হয়ে নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। এছাড়া মেয়রের অনুসারীদের পক্ষ থেকে নগরীর দুই থানায় পরিষদের ৩ নেতার বিরুদ্ধে দুটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

চসিক মেয়র বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় এই বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আমির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নগরীতে করদাতাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগস্ট মাস থেকে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি।'

মেয়রকে নিয়ে পরিষদের সভাপতির বক্তব্য প্রসঙ্গে আমির বলেন, 'আমরা এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছি- মাননীয় মেয়র আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলে আমরা তার কাছেও দুঃখ প্রকাশ করবো কিন্তু চট্টগ্রামের স্বার্থে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না।'

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: A day of sharing for some, a day of struggle for others

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

1h ago