সংবাদ প্রকাশের পর টাকা ফেরত পেলেন চা-শ্রমিকরা, খুঁটি সরিয়ে নিলেন ঠিকাদার

ফুলতলা চা বাগানের আওতাধীন এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের মন্দিরের সামনে রাখা পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ছবিটি গত ১৮ সেপ্টেম্বর তোলা। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা চা বাগানের এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের শ্রমিকদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা অবশেষে শ্রমিকেরা ফেরত পেয়েছেন।

ডেইলি স্টারে সংবাদ প্রকাশের পর বাগানের ৩৫০ চা-শ্রমিকের কাছ থেকে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কথা বলে প্রথম কিস্তিতে নেওয়া ৭০ হাজার টাকা ঠিকাদারের মনোনীত ইলেকট্রিশিয়ান ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের সর্দার সজল বুনার্জি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি জানান, ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান আহমদ ওই টাকা ফেরত দিয়েছেন।

গত রোববার ডেইলি স্টারে সংবাদ প্রকাশ হলে পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করে।

পরে পিডিবির আওতাধীন এলাকায় টেন্ডার ছাড়া পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি পৌঁছা এবং চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ঘটনা তদন্তে ২ সদস্যের কমিটি গঠন করেন মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তরের ডিজিএম (কারিগরি) মো. নজরুল ইসলাম মোল্লাকে প্রধান করে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্য হলেন বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন।

সোমবার কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

পরদিন মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের মন্দির এলাকা পরিদর্শন করেন এবং চা-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

ওইদিনই এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের মন্দির এলাকা থেকে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সরিয়ে নেন ঠিকাদারের লোকজন।

এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের সর্দার সজল বুনার্জি বলেন, 'বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য আমাদের একটা কমিটি হয়েছিল। ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান ঠিকাদার দুলুকে দেওয়ার জন্য যে টাকাগুলো নিয়েছিল তা তিনি কমিটির কাছে ফেরত দিয়েছেন। শাহাজান বলেছেন তারা বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবে না। তাই টাকা ফেরত দিয়েছেন।'

চা-শ্রমিকদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা স্বীকার করে ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান আহমদ বলেন, 'দুলু মণ্ডলের কাছে কিছু টাকা ছিল, আমার কাছেও কিছু ছিল। শনিবার ঠিকাদার দুলু ওই টাকাগুলো আমাকে ফেরত দিয়েছেন। এরপর আমি চা-শ্রমিক নেতাদের কাছে টাকাগুলো ফেরত দিয়েছি। এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।'

তবে ঠিকাদার আব্দুল মালেকের সুপারভাইজার দুলু মণ্ডল বলেন, 'ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজানের সাথে আমার কোনো লেনদেন হয়নি। সে হয়তো আমাদের কথা বলে চা-শ্রমিকদের থেকে টাকাগুলো নিয়েছে। আর বাগান এলাকায় রাখা খুঁটিগুলো আমরা আশপাশের এলাকায় সংস্কার কাজের জন্য রেখেছিলাম। বর্ষার জন্য কাজ করতে পারিনি। এখন খুঁটিগুলো নিয়ে গেছি।'

মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া ও পিডিবির এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি যাওয়ার ঘটনাটি তদন্তে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। নিজেও ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার জন্য ২০২০ সালের দিকে ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন করেছিল মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ওই বাগানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আওতায় গ্রাহক থাকায় মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জিয়াউর রহমান ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর অনাপত্তিপত্র (এনওসি) চেয়ে আবেদন করেন। এই বছরের ৩০ অক্টোবর পিডিবি অনাপত্তিপত্র প্রদান না করার কারণ জানিয়ে পবিসকে চিঠি দেয়। এরপর পিডিবির অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সব কার্যক্রম স্থগিত রাখে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)।

তবে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের দিকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য টেন্ডার পেয়েছেন জানিয়ে এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ঠিকাদার মালেক, সুপারভাইজার দুলু এবং স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান আহমদ। বিদ্যুৎ সংযোগের বিনিময়ে ৩৫০ চা-শ্রমিকের প্রত্যেকের পরিবারের কাছ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা করে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা নেওয়ার চুক্তি করেন তারা। চুক্তি অনুযায়ী চা-শ্রমিকেরা প্রথম কিস্তিতে অগ্রিম ৭০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এরপর সেখানে পল্লী বিদ্যুতের ৩৬টি খুঁটি এনে রাখা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

7h ago