ক্যানসারে মারা যাওয়া সহকর্মীর পেনশন চালু করতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ

মো. ঈছা। ছবি: সংগৃহীত

ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগের সাবেক প্রধান সহকারী আশীষ কুমার চৌধুরীর পেনশনের টাকা তুলতে এবং মাসিক ভাতা চালু করতে তার স্ত্রী মিতা চৌধুরীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একই অফিসের ফরেস্ট গার্ড মো. ঈছার বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন ওই ফরেস্ট গার্ড মো. ঈছা।

আশীষ কুমার চৌধুরীর স্ত্রী মিতা চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাগজপত্র প্রসেস করার সময় পেনশনের টাকা তোলা এবং মাসিক ভাতা চালু করতে কিছু টাকা দরকার বলে জানান ডিএফও অফিসের কর্মচারী মো. ঈছা। গত আগস্ট মাসে আমি আর মো. ঈছা ঢাকায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের চিফ একাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে আমি তাকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি।'

কেন ঘুষ দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আমার স্বামী। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। পেনশনের টাকাটা পেলে কিছুটা স্বচ্ছলভাবে চলা যাবে। তাই বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়েছি।'

টাকা দেওয়ার বিপরীতে কোনো ডকুমেন্ট নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ঘুষ লেনদেনে আবার কিসের ডকুমেন্টস? ঈছা আমাকে কোনো ডকুমেন্টস দেয়নি।'

দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগে গত ২৩ মার্চ মারা যান আশীষ কুমার চৌধুরী।

গত মঙ্গলবার উপকূলীয় বনবিভাগের চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কার্যালয়ে কথা হয় অভিযুক্ত ফরেস্ট গার্ড মো. ঈছার সঙ্গে। ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে প্রথম তিনি অস্বীকার করেন। পরে যাবতীয় তথ্য আছে জানালে তিনি ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।

ঈছা বলেন, 'আমি ৫০ হাজার টাকা নিয়েছি। অফিশিয়াল প্রয়োজনে টাকাটা নিতে হয়েছে। আমি এই টাকা ফেরত দিয়ে দেব। যদি আমার লস হয় তবুও আমি টাকা দিয়ে দেব।'

অভিযোগ রয়েছে, ফরেস্ট গার্ড হলেও দীর্ঘদিন ধরে ডিএফও অফিসের দাপ্তরিক কাজগুলো করে আসছেন ইছা। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।

উপকূলীয় বনবিভাগের দাপ্তরিক কাজ করতে হলেও এই ঈছাকে ঘুষ দিতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপকূলীয় বনবিভাগ মিরসরাই রেঞ্জের একজন কর্মী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিবছর ইনক্রিমেন্টের জন্য একটি আবেদন করতে হয়। সেটি করতেও ফরেস্ট গার্ড মো. ঈছাকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে তিনি আবেদন ফরম সরবরাহ করেন না।'

এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপকূলীয় বনবিভাগের চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি আমার নলেজে নেই। তবে, যিনি ঘুষ দিয়েছেন এবং যিনি নিয়েছেন; উভয়ই অপরাধ করেছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আশীষ কুমার চৌধুরী বনবিভাগের একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। তার পেনশনের ফাইলটি অল্প সময়ের মধ্যে আমি নিজে রেডি করে দিয়েছি।'

'আমি উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলব। পাশাপাশি ভুক্তভোগী যদি অভিযুক্ত ফরেস্ট গার্ড মো. ঈছার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন, সেটির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগটি তদন্ত করা হবে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে', বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা অনুসারে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক কোনো সরকারি কাজ বৈধ পারিশ্রমিক ছাড়া অন্যকোন রকম বখশিশ নিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বখশিশ গ্রহণ বা গ্রহণে সম্মত বা গ্রহণের চেষ্টা করলে সেই কর্মকর্তা-কর্মচারী যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যার মেয়াদ ৩ বছর পর্যন্ত হতে পারে বা জরিমানা বা উভয়প্রকার দণ্ড হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

7h ago