বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি জাতিসংঘে উত্থাপনে আসিয়ান রাষ্ট্রদূতদের সমর্থন

আসিয়ান কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ ব্রিফিং। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সীমান্তে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক কার্যক্রম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপনের বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত আসিয়ান দেশগুলোর কূটনীতিকরা।

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় সহিংসতা রোধে সহযোগিতা চাওয়ায় তারা এ সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকরা বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে, এতে তারাও হতাশ। 

এ সময় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব অ্যাডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক নাজমুল হুদা সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে আসিয়ানের রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করেন।

মিয়ানমার ছাড়া আসিয়ানভুক্ত ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূতরা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

নাজমুল হুদা দ্য ডেইলি স্টারকে, 'আমরা আসিয়ান রাষ্ট্রদূতদের বলেছি যে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের দিকে মর্টারশেল নিক্ষেপ ও গোলাবর্ষণ আমাদের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এতে গত শুক্রবার রাতে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।'

'এছাড়াও, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এবং অনেককে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের জীবন, জীবিকা ও সম্পদ হুমকির মুখে পড়েছে,' বলেন তিনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াও মোকে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত ৪ বার তলব করলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

সরকার বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড এবং কোস্টগার্ডকে উচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এখনো সেনা মোতায়েন করেনি সরকার।

নাজমুল হুদা বলেন, 'আমরা আরও বলেছি যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দেশই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সম্মত হয়েছে। কিন্তু রাখাইনে সংঘাত অব্যাহত থাকলে প্রত্যাবাসনের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। এরকম হলে রোহিঙ্গারা নিরাপদে থাকবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'মর্টারশেল ও গোলা বর্ষণের বিষয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত আরাকান আর্মিকে দায়ী বলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ঢাকা বলেছে যে যাই হোক না কেন মিয়ানমারকে আকাশ বা স্থলসীমা লঙ্ঘনের দায় নিতে হবে।'

আসিয়ান রাষ্ট্রদূতদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারা বিষয়টি তাদের দেশে জানাবেন এবং মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জোরালোভাবে উত্থাপন নিশ্চিত করবেন।'

আসিয়ান কূটনীতিকরা বলছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং গণতন্ত্রপন্থী বেসামরিক বাহিনীর মধ্যে বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি দেখে তারা অসন্তুষ্ট। গত বছরের শুরুর দিকে আসিয়ান বৈঠকে ৫ দফা ঐকমত্যের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তারা হতাশ।

এগুলোর মধ্যে ছিল-মিয়ানমারে অবিলম্বে সহিংসতার অবসান, সব দলের মধ্যে সংলাপ, বিশেষ দূত নিয়োগ, আসিয়ানের মানবিক সহযোগিতা দেওয়া এবং বিশেষ দূতের মিয়ানমার সফরে সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক।

নাজমুল হুদা বলেন, 'আমরা আশা করি আসিয়ান দেশগুলো মিয়ানমারে সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বন্ধ করতে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।'

আগামীকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকায় অবস্থানরত বাকি বিদেশি কূটনীতিকদের মিয়ানমারের স্থল ও আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিষয়ে অবহিত করা হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

9h ago