সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ষড়যন্ত্র করছে টিআইবি: খাদ্য মন্ত্রণালয়

খাদ্য মন্ত্রণালয়

বেশি দামে গম আমদানি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় দাবি করে, সরকার বেশি দামে গম কেনেনি এবং কোনো অনিয়মও হয়নি।

খাদ্য মন্ত্রণালয় মনে করে সঠিক তথ্য গোপন করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে টিআইবি। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এ ষড়যন্ত্র করছে তারা।

আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানায় খাদ্য মন্ত্রণালয়।

টিআইবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভুল ও অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছে জানিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, টিআইবির বিবৃতিতে গণখাতের ক্রয় আইন লঙ্ঘন করে রাশিয়া থেকে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) পাঁচ লাখ টন গম কেনায় তৃতীয় একটি পক্ষকে যুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

এর ব্যাখ্যায় মন্ত্রণালয় জানায়, গম ও চাল ক্রয়ের খাদ্য মন্ত্রণালয় গণখাতে ক্রয় আইন লঙ্ঘন করেনি এবং কোনো তৃতীয় পক্ষকে ক্রয় প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেনি। যে তৃতীয় পক্ষের নাম বলা হচ্ছে, তাদেরকে রাশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে লোকাল এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জিটুজি কার্যক্রমে সরকার নির্ধারিত কমিটির সদস্যরা (বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের) বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে নেগোসিয়েশন প্রক্রিয়ায় অংশ নেন এবং সভায় সর্বসম্মতভাবে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন। নেগোসিয়েশনের পর খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটি ক্রয় কমিটিতে যায়। ক্রয় কমিটি বিস্তারিত আলোচনার পর অনুমোদন দেয়। তারপর খাদ্য মন্ত্রণালয় কার্যাদেশ দেয়। এখানে তৃতীয় কোনো পক্ষের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।

বেশি দামে গম কেনা হচ্ছে তথ্যটি সঠিক নয় জানিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেন-রাশিয়ার  যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজার গম সংগ্রহ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে বাংলাদেশের গম আমদানির অন্যতম উৎস ভারত সরকারি ও বেসরকারি গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় গম আমদানি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। গমের নিরাপত্তা মজুত যেখানে কমপক্ষে দুই লাখ মেট্রিকটন থাকার কথা সেটা  একপর্যায়ে ১ দশমিক ২৫ লাখ মেট্রিক টনে নেমে আসে। বর্তমান মজুত ১ দশমিক ২২ লাখ মেট্রিকটন। পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ গম রপ্তানি করে না। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে জিটুজি প্রক্রিয়ায় গম সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতি ক্ষেত্রে গমের দাম ৫০০ ডলারের ওপরে হওয়ায় সরকার সেখান থেকে গম ক্রয়ে আগ্রহী হয়নি।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রাশিয়ার সাথে গম আমদানির প্রথম নেগোসিয়েশন শুরু হয় গত ২৩ জুন। সে সময়ে রাশিয়া গম সরবরাহে সম্মত হয়নি তারপর সরকারি পর্যায়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু হয়। ২৪ আগস্ট রাশিয়ার সাথে গম আমদানির দ্বিতীয় নেগোসিয়েশন হয়। তখন রাশিয়ার গমের এফওবি মূল্য ছিল ৩৩০ মার্কিন ডলার। জাহাজ ভাড়া, লোডিং আনলোডিং, বার্থঅপারেটর হ্যান্ডলিং, ইনসুরেন্স ও লাইটেনিংসহ সর্বমোট মূল্য নির্ধারণ হয় ৪৩০ মার্কিন ডলার, যা যুক্তিসংগত ও সঠিক। সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ক্রয় কার্যক্রম অনুমোদন দেওয়া হয়। উল্লেখ্য একসাথে ৫ লাখ মেট্রিকটন গম দেশে এনে সংরক্ষণ  করার সক্ষমতা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। রাশিয়া থেকে গম সরবরাহ কার্যক্রম ৪ মাস ধরে চলবে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এক পূর্বাভাসে বলেছে আগামী বছর বিশ্বে খাদ্য ঘাটতি হতে পারে। সেকারণে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে অগ্রিম সতর্কর্তা হিসেবে এক সাথে ৫ লাখ মেট্রিকটন গম ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার গমের এফওবি মূল্য ছিল ৩৩৪ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার। প্রতিনিয়ত গমের এফওবি মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। জিটুজি এর পূর্ববর্তী দুইটি আন্তর্জাতিক দরপত্রে গমের ক্রয়মূল্য ছিল যথাক্রমে ৪৭৬.৩৮ এবং ৪৪৮.৩৩ মার্কিন ডলার।

টিআইবি বিবৃতিতে বিতর্কিত প্রডিনটর্গকে কার্যাদেশ দেওয়ার ব্যাখ্যায় মন্ত্রণালয় জানায়, প্রডিনটর্গ রাশিয়ার গম রপ্তানির জন্য রাশিয়া সরকার কর্তৃক মনোনীত প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার প্রডিনটর্গকে মনোনীত করে নাই। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে প্রতিষ্ঠানটি জিটুজি ভিত্তিতে বাংলাদেশে গম সরবরাহ করে আসছে।

মাত্র এক লাখ টন গম চুক্তি অনুয়ায়ী সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়া প্রতিষ্ঠান, কোন জাদুবলে পাঁচ লাখ টন গম সরবরাহের কাজ পেল টিআইবির এমন অভিযোগে মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রডিনটর্গ ৩ লাখ টন গম যথাসময়ে নিয়ম মাফিক বাংলাদেশকে সরবরাহ করেছে। ২০২০-২১ সালে করোনাকালে ২ লাখ মেট্রিকটন চুক্তিবদ্ধ ছিল। প্রতিকূলতার মধ্যে তারা ১ লাখ মেট্রিকটন গম সরবরাহ করে। পূর্ববর্তী ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রডিনটর্গ ২ লাখ মেট্রিকটন গম বাংলাদেশকে সঠিককভাবে সরবরাহ করেছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রডিনটর্গ মোট ৪  লাখ মেট্রিকটন গম সঠিকভাবে সরবরাহ করেছে।

বিশ্বের কোনো দেশ প্রডিনটর্গের সাথে চুক্তি করে তা বাতিল করেছে কিনা কিংবা কেন করেছে এর বিস্তারিত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই বলেও জানানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Climate finance: $250b a year needed

COP29 draft deal says rich nations should pay the amount to fight climate change

5m ago