জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে গুমের আরও ৫ মামলা

ইলাস্ট্রেশন: বিপ্লব চক্রবর্তী

জাতিসংঘের গুমবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটি 'ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স' বাংলাদেশে গুমের আরও ৫টি নতুন মামলা নথিভুক্ত করেছে।

এ নিয়ে এই কমিটির কাছে বাংলাদেশের গুম সংক্রান্ত তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা ৮১ তে পৌঁছালো।

এই ৫টি মামলার মধ্যে ২টি ঘটনা ঘটেছে ২০২১-২২ সেশনের মধ্যে। অন্য ৩টি ঘটনা এর আগের।

এই নতুন মামলাগুলো নিয়ে কমিটি সরকারকে চিঠি দিলেও সরকারের তরফ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

মামলাগুলোর বিশদ বিবরণ জানা সম্ভব হয়নি। কারণ, গুমসংক্রান্ত এই বিশেষজ্ঞ কমিটি কেবল সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার কাছে নামগুলো প্রকাশ করেছে।

হংকংভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের (এএইচআরসি) তথ্য অনুসারে, এই সময়কালে নতুন ১৯টি গুমের ঘটনা ঘটেছে এবং ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪ জন এখনো নিখোঁজ আছেন।

এএইচআরসি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবর থেকে গুমের একটি হিসাব রাখে।

জাতিসংঘের গুমবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটি যে নতুন ৫টি মামলা নথিভুক্ত করেছে তার মধ্যে ২টিকে 'টাইম-সেনসেটিভ' কিংবা 'আর্জেন্ট প্রসিডিওর' মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।

যখন কাউকে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয় তখন সেটাকে জাতিসংঘ আর্জেন্ট প্রসিডিওর মামলা হিসেবে বিবেচনা করে এবং সরকারকে তাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে।

এর অর্থ হলো, জাতিসংঘ যখন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন তাদের কাছে এমন প্রমাণ ছিল যে ২ ব্যক্তিকে জোর করে ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হয়েছে।

মামলাগুলো এখন পর্যন্ত অমীমাংসিত। আর এটাও স্পষ্ট নয় যে, ওই ২ ভুক্তভোগীকে কি আদৌ মুক্তি দেওয়া হয়েছে, নাকি তারা এখনো নিখোঁজ আছেন।

আগামীকাল সোমবার জাতিসংঘে ওয়ার্কিং গ্রুপের ১২৮তম অধিবেশনে সব মামলার ওপর আলোচনা শুরু হবে। চলবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

ওয়ার্কিং গ্রুপের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে ৪টি চিঠি পাঠিয়েছে।

এগুলোর মধ্যে ১টি ছিল জরুরি আবেদন, যা অজ্ঞাত পরিচয়ে আটক ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতা বজায় রাখা এবং একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালের সামনে তাদের ন্যায্য কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া সংক্রান্ত।

আরেকটি চিঠিতে বাংলাদেশে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজন ও মানবাধিকার কর্মীদের হয়রানি ও হুমকির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

এছাড়া গুমের শিকার হওয়া থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষাসংক্রান্ত ঘোষণার (ডিক্লারেশন অন দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স) লঙ্ঘন এবং এ ঘোষণা বাস্তবায়নে বাধা সংক্রান্ত একটি যৌথ ও সাধারণ অভিযোগপত্র পাঠিয়েছে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ।

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে ওয়ার্কিং গ্রুপের পাঠানো চিঠিগুলোর একটিতে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে পুলিশি হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। আরেকটি চিঠিতে বেসরকারি সংস্থা 'অধিকার'র বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় হয়রানি সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই চিঠির জবাব দিলেও তাতে পুলিশি হয়রানির কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মামলাগুলো স্পষ্ট করার জন্য ওয়ার্কিং গ্রুপ কর্তৃপক্ষকে ১২৫তম অধিবেশনের পর পাঠানো সাধারণ অভিযোগের জবাবসহ অতিরিক্ত তথ্য প্রদানের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত গুমের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।'

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'ওয়ার্কিং গ্রুপ জোর দিয়ে বলেছে যে, সরকারকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের পাশাপাশি তাদের পক্ষে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থা ও নাগরিক সংগঠনগুলোকে দেওয়া হুমকি, প্রতিশোধমূলক আচরণ ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন থেকে অবশ্যই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।'

এ ছাড়া গুমসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন 'অধিকার'র নিবন্ধন নবায়ন না করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, সে ব্যাপারে প্রতিবেদনে উদ্বেগের কথা জানায় ওয়ার্কিং গ্রুপ।

এতে মনে করিয়ে দেওয়া হয়- অভিযোগকারী, কৌঁসুলি, সাক্ষী এবং তদন্ত পরিচালনাকারীসহ তদন্তের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তিকে অবশ্যই দুর্ব্যবহার, ভয় দেখানো বা প্রতিহিংসা থেকে রক্ষা করতে হবে।

গ্রুপটি বাংলাদেশ সফর করার আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে যে, তারা ২০১৩ সাল থেকে এ বিষয়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপের ১২৬তম অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আগামী ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে এই বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Stocks fall on poor performance of large companies

Indexes of the stock market in Bangladesh declined yesterday on rising the day before, largely due to the poor performance of Islami Bank Bangladesh along with the large-cap and blue-chip shares amid sales pressures..Large-cap refers to shares which account for large amounts in market capi

4h ago