আ. লীগ প্রার্থীর বিজয় প্রার্থনা করায় চট্টগ্রামের ডিসির বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

আজ শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সংস্থাপন সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে এ আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী।

নোটিশ পাঠানো আইনজীবী এম মাহবুবুর রহমান খান অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত 'আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় কামনা করে রিটার্নিং অফিসারের দোয়া ও বক্তব্য' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি তুলে ধরেন। 

নোটিশে বলা হয়, তার বক্তব্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা একটি রাজনৈতিক দলের জন্য ভোট চেয়েছেন এবং অন্যদেরকে ওই রাজনৈতিক দলের জন্য দোয়া করার অনুরোধ জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে তার নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকা উচিত ছিল। নোটিশপ্রাপক (ডিসি) একটি প্রার্থনা অনুষ্ঠানে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিজয় কামনা করায় আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়ে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে শঙ্কা ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে।  

আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ডিসি বক্তব্য একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এ অবস্থায় সব ভোটার ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানা গেছে। নোটিশগ্রহীতা (ডিসি) কার্যক্রম নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।

নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার (ডিসি) মাধ্যমে জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা-২০১৬-এর ৭৯, ৮০ ও ৮১ বিধি লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও অন্যান্য নোটিশ গ্রহীতার সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন, যা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। 

নোটিশের শেষে বলা হয়, নোটিশ প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিসির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিলে নোটিশদাতা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম মাহবুবুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে বিজয়ের কথা বলে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ কারণে তাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়ছি।  তার এই বক্তব্যে অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন।'

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

এ জন্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীরও দোয়া করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় তিনি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিজয় কামনা করেন।

বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে সভায় ডিসি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের ক্ষমতা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে থাকলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত-সবাই আমাদের দেশে নিরাপদ থাকবে।" আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন শেখ হাসিনার পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য প্রার্থনা করা উচিত। 

আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সম্প্রীতি সভার আয়োজন করা হয়। ওই দিনই ছিল জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

বেলা ১১টার দিকে সভা চলাকালে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম সেখানে প্রবেশ করেন। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন বলে সূত্র জানায়। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর সবাই হাত তুলে দোয়ায় অংশ নেন। এ সময় ডিসি নেতাদের সঙ্গে হাত তুলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পেয়ারুলের বিজয় কামনা করেন বলে সূত্র জানায়।

মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর সম্প্রীতি বৈঠকে বসেন নেতারা। ডিসি মমিনুর বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর শাখার সব স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত রয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাকে ধ্বংস করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি মমিনুর বলেন, আমি সাধারণত আমার অফিসে মনোনয়ন জমা নিই। সম্প্রীতি সভা চলাকালে পেয়ারুল মনোনয়ন জমা দিতে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করেন। আমি সেখানে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, 'সম্প্রীতির সভায় কথা বলেছি। সেখানে মনোনয়ন জমা দিতে আসা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দুর্গাপূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের দায়িত্ব নিতে বলেছি। জাতির পিতার কথা বলেছি; দেশের উন্নয়নের কথা বলেছি। এটাকে ভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে। অপপ্রচারের জন্য আমার বক্তব্য টুইস্ট করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের একজন কর্মচারী হিসেবে আমি জানি কী বলতে হবে আর কী বলতে হবে না। নির্বাচন নিয়ে কিছু বলিনি। '

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago