লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতে ইসির শতভাগ নিরপেক্ষ অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ: টিআইবি

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

সবার জন্য সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটি মনে করে এজন্য অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচন কমিশনের শতভাগ নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করা।

আজ বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানায় টিআইবি।

আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং সর্বোপরি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে পরিণত করা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সুশাসন অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করে সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান 'অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন: গণতান্ত্রিক সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে করণীয়' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

প্রবন্ধে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনকে প্রদত্ত সাংবিধানিক বিশেষ দায়িত্ব ছাড়াও নির্বাচনকালীন সরকার ও তার প্রশাসনিক যন্ত্র বিশেষত প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের ভূমিকা নিশ্চিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে।

সব রাজনৈতিক দলের জন্য সুষ্ঠু, অবাধ প্রতিযোগিতার সুযোগ না সৃষ্টি করতে পারলে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ভোটবাক্স বা ইভিএমের ব্যবহারসহ সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়ে বলে জানায় টিআইবি।

সংস্থাটি জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের ভোট নিজে না দিতে পারা, ভোটারদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়া, ভোটকেন্দ্রে এবং ভোট গণনার সময় সব দলের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গবেষণালব্ধ তথ্য উপাত্তও এসব অভিযোগের স্বপক্ষে ছিল এবং এখনো এগুলো নির্বাচন-কেন্দ্রিক উদ্বেগের কেন্দ্রীয় উপাদান হিসেবে বিরাজ করছে।

প্রবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয়, সংশ্লিষ্ট সব আইন ও বিধি এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে সব দলের জন্য সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত হয়। এই সম-অবস্থান সৃষ্টির লক্ষে অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নির্বাচন কমিশনের শতভাগ নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে আইনি সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যক্রম সীমিত রুটিন কাজে সীমাবদ্ধ করা। এ ছাড়া, আনুষ্ঠানিক প্রচারাভিযানসহ নির্বাচনী আচরণ বিধিসমূহ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা অনুযায়ী বিশেষত সরকারি দলের পক্ষ থেকে মেনে চলার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচনকে অর্থবহ ও জনগণের প্রতিনিধিত্বশীলতার ক্ষেত্রে কার্যকর করতে নির্বাচনী মনোনয়নকে দুর্নীতিমুক্ত করে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটার সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বা সব নিবন্ধিত দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করতে হলে কোন বিষয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য প্রয়োজন, নির্বাচন কমিশনের উচিত তা বিশ্লেষণ করা। এক্ষেত্রে মূল উদ্বেগের বিষয় হলো-নির্বাচনে সবার জন্য সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে একদিকে নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিতে ও অন্যদিকে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা স্বপদে বহাল থেকে নির্বাচন করলে স্বাভাবিকভাবেই যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হয়, তা প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশনের উচিত প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা। নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই একমাত্র উপায় নয়। বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক চর্চা অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে যে ধরনের রূপরেখার আওতায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা অনুসরণের জন্য উল্লিখিত আইনি সংস্কার অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। তবে একইসঙ্গে নির্বাচন আয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।'

সর্বশেষ দুটি জাতীয় নির্বাচনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের অত্যন্ত বিতর্কিত ভূমিকা মাঠ পর্যায়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হওয়ার মূল কারণ ছিল উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'নির্বাচনকালে এই সংস্থাসমূহের বদলি ও পদায়নসহ সার্বিক কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকতে হবে। অন্যদিকে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সকল অংশীজনের প্রতিবন্ধকতাবিহীন অংশগ্রহণ ও  নির্বাচনসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, প্রচার ও প্রকাশকে অবাধ ও মুক্ত রাখার জন্য নির্বাচন কমিশনকে কঠোরভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।' 

ইভিএম বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত বিতর্কিত ও দৃশ্যত পূর্বনির্ধারিত উল্লেখ করে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ইভিএম ব্যবহারের রাজনৈতিক, কারিগরি ও আর্থিক লাভ-ক্ষতির বস্তুনিষ্ঠ ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত কর্ম-পরিকল্পনাকে চলমান খসড়া হিসেবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত গ্রহণ সাপেক্ষে চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

For the poor, inflation means a daily struggle

As inflation greets Bangladeshis at breakfast time, even the humble paratha becomes a symbol of struggle. Once hearty and filling, it now arrives thinner and lighter -- a daily reminder of the unending calculations between hunger and affordability.

8h ago