নরসিংদীতে বীর নিবাস নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

নরসিংদীর মনোহরদীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য নির্মাণাধীন একটি বীর নিবাসে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। 
নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তুলে উপজেলা পরিষদের সামনে প্রতিবাদ জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত মোহাম্মদ উল্লাহ মোল্লার ছেলে সাকিব মোল্লা। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর মনোহরদীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য নির্মাণাধীন একটি বীর নিবাসে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। 

বীর নিবাস নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল সোমবার উপজেলা পরিষদের ফটকের সামনে অবস্থান নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত মোহাম্মদ উল্লাহ মোল্লার ছেলে সাকিব মোল্লা।

এ সময় তিনি নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ইট ও বালুসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শন করেন। তার সঙ্গে থাকা ফেস্টুনে লেখা ছিল 'অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্ত উপহার দিন, না হলে উপহার ফিরিয়ে নিন', 'প্রধানমন্ত্রীর উপহার বীর নিবাস নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতি কেন', 'উপহারের নামে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার চাই' ও 'অধিকার চাই, দুর্নীতি নয়।'

সাকিব মোল্লা (২৩) রাজধানীতে সরকারি তিতুমীর কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গৃহহীন ও ভূমিহীন সাকিব মাকে নিয়ে নানার বাড়িতে বসবাস করেন।

এর আগে বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ৩০ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন সাকিবের মা বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত মোহাম্মদ উল্লাহ মোল্লার স্ত্রী রুবি বেগম।

ইউএনওর নির্দেশে বীর নিবাস পরিদর্শনে যান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন রাজি। ছবি: সংগৃহীত

লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ১২ দিন পার হলেও এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় উপজেলা পরিষদের সামনে ফেস্টুন নিয়ে একাই এই প্রতিবাদ জানান সাকিব।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাসুলীকান্দি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ উল্লাহ মোল্লার পরিবারকে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বীর নিবাসে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দ দেওয়া ওই ঘরের নির্মাণকাজ গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করেন ঠিকাদার। সরকারী চুক্তি অনুযায়ী মানসম্পন্ন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না এখানে। নিম্নমানের ইট, বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। 

তারা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কাছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে অভিযোগও জানান। তবে তাদের দাবি, ঠিকাদার তাদের বলেন যে এসব সামগ্রী দিয়েই কাজ চলবে। এ নিয়ে কাউকে কিছু বলে লাভ হবে না। 

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য থাকার ঘর, টয়লেট ও টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করে দিতে বলা হচ্ছে এবং আধা কিলোমিটার দূরের সড়ক থেকে ইট ও বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী বহন করে নিয়ে আসতে বলা হয়। 

প্রতিবাদকারী সাকিব মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কোনো ঘরবাড়ি না থাকায়, মাকে নিয়ে নানার বাড়িতে থাকি। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই উপহারের ঘর আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কিন্তু শুরু থেকেই বীর নিবাস নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে আমার মা লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।'

'তাই বাধ্য হয়ে আমি উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থান করে প্রতিবাদ জানিয়েছি,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'ইউএনও আমাকে ডেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে আমি সেখান থেকে চলে আসি। এরপরই তার নির্দেশে ওই বীর নিবাস পরিদর্শনে যান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন রাজি।'

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন রাজি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুমন বর্মণ এই বীর নিবাস নির্মাণকাজের ঠিকাদার। ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর লিখিত অভিযোগ ও তার ছেলের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও স্যার আমাকে বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য বলেছেন। আমি সেখানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা কতটুকু, তা যাচাই করে দেখব।' 

ঠিকাদার সুমন বর্মণ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মনোহরদীতে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৩ কক্ষের বীর নিবাস নির্মাণের কাজ করছি আমি। এর মধ্যে ৯টি বীর নিবাস নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তারা আমার কাজে সন্তুষ্ট। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ উল্লাহ মোল্লার ছেলে সাকিব মোল্লার আমার কাজ পছন্দ না। তার বাধায় আমি দীর্ঘদিন ওই বীর নিবাস নির্মাণের কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। সম্প্রতি ৯টি বীর নিবাস নির্মাণকাজের বিল জমা দিতে গেলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমাকে জানান যে একটি কাজ বাকি রেখে বিল নিতে পারব না।'

'পরে আমি নিজে ইটভাটায় গিয়ে সবচেয়ে ভালো ইট কিনে গত শনিবার থেকে কাজ শুরু করি। এরপরও তার ভাষ্য, এই ইট দুই নম্বর। এই ইট খারাপ কি না, তা যাচাই করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, তিনি নন,' বলেন ঠিকাদার।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এস এম কাশেম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বীর নিবাসের নির্মাণকাজ সরেজমিনে দেখে আসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে আমি নিজেও সেখানে যাব। কোনো ধরনের অনিয়মের সত্যতা পেলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।' 

Comments

The Daily Star  | English

$800m repayment to Russia in limbo

About $809 million has piled up in a Bangladesh Bank escrow account to repay loans and interest for the Russia-funded Rooppur Nuclear Power Plant.

8h ago