সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের ‘কর্মবিরতি’,  চরম যাত্রী ভোগান্তি

ছবি: স্টার

সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশে ময়মনসিংহ থেকে আজ ভোরে সিলেটের হুমায়ুন রশীদ চত্বরে পৌঁছান ষাটোর্ধ্ব নওয়াব আলী ও তার স্ত্রী। তবে, পরিবহন শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে কোনো যানবাহন না পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় রাস্তার পাশেই চাদর পেতে শুয়ে পড়েন তিনি।

একই কারণে ভোগান্তিতে পড়েন কামাল হোসেন নামে একজন। নড়াইল থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় যাওয়ার উদ্দেশে সিলেট আসেন। কিন্তু সিলেট বাস টার্মিনালে পৌঁছে দোয়ারাবাজারগামী কোনো বাস না পেয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েন এই পরিবার।

কামাল হোসেন বলেন, 'শ্রমিকরা যেকোনো দাবিতেই হঠাৎ করে ঘোষণা ছাড়াই পরিবহন ধর্মঘট ডাকে আর ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। এত দূর থেকে এসে এখন কীভাবে বাকি রাস্তা পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরব তা জানি না।'

পূর্বঘোষিত ৫ দফা দাবিতে সিলেট জেলায় পরিবহন শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের 'কর্মবিরতি' পালন করছেন আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে। সকাল থেকে সিলেটের কোনো বাস টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়া নগরী ও জেলার বিভিন্ন অংশে অটোরিকশাসহ অন্য কোনো গণপরিবহন চলছে না। এতে চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।

এরই মধ্যে সকাল ১১টা নাগাদ সিলেটে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। এতে ভোগান্তি বেড়েছে বিভিন্ন বাস টার্মিনালে আটকা পড়া যাত্রীদের।

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের ডাকে এই 'কর্মবিরতি' আজ সিলেট জেলায় ও আগামীকাল বুধবার থেকে পুরো সিলেট বিভাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় পালিত হবে।

সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই ৫ দাবি জানিয়ে আসলেও নানা টালবাহানা করে আমাদের কোনো দাবি মানা হয়নি।'

'গত ৮ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন করেছি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছি' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তারপরও দাবি মানা না হওয়ায় আমরা কর্মবিরতি পালন করছি।'

'আজ সিলেট জেলার রাস্তায় গাড়ি চলবে না। আগামীকাল বুধবার থেকে সিলেট বিভাগে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিবহন শ্রমিকরাও একাত্মতা ঘোষণা করে আগামীকাল থেকে কর্মবিরতিতে নামবেন,' যোগ করেন তিনি।

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ বলেন, 'এ আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেছেন নিবন্ধিত পরিবহন শ্রমিকদের ৬ সংগঠন। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চলবে।'

শ্রমিকদের ৫ দাবির মধ্যে আছে, ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি, রেকারিং বাণিজ্য ও মাত্রাতিরিক্ত জরিমানা আদায় বন্ধ, মহানগর পুলিশ কমিশনার, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার ও অতিরিক্ত উপকমিশনারকে প্রত্যাহার; গাড়ি ফিটনেস মামলা সঠিকভাবে করা, সিলেট শ্রম আদালতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোকে হয়রানি বন্ধ এবং আদালত থেকে শ্রমিক প্রতিনিধি নাজমুল আলম রোমেনকে প্রত্যাহার; হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ পাথর কোয়ারি খুলে দিতে হবে; সিলেটের সব ভাঙা সড়ক সংস্কার করতে হবে এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিক্রি বন্ধ করতে হবে। অটোবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ডাম্পিং করা গাড়ি ও অন্য জেলা থেকে আগত গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Nahid calls for preparations for another mass uprising if ‘old game’ doesn’t end

He made these remarks during a street rally at Chashara intersection, Narayangaj

54m ago