রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্মৃতিবিজড়িত বৈরাগীরচালা গ্রাম

ঢাকা থেকে ট্রেনে শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রামে যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ৩ যুগ আগে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রামে স্বনির্ভর গ্রাম দেখতে গিয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

গতকাল রাতে রানির মৃত্যুতে তার স্মৃতিবিজড়িত বৈরাগীরচালা গ্রামের মানুষও শোকাহত।

রানির আগমন উপলক্ষে ওই বছর গ্রামটিতে বিদ্যুতের ছোঁয়া লেগেছিল। শ্রীপুর থেকে বৈরাগীরচালা সড়কটি পাকা করা হয়। শ্রীপুর রেলস্টেশন প্ল্যাটফরম পাকা করা হয়। 

এছাড়া উপজেলা পরিষদ ও হাসপাতালের নতুন ভবন এবং অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।

অর্থাৎ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আগমন উপলক্ষে শ্রীপুরকেই নতুন করে সাজানো হয়। এরপর থেকেই রানিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণে রেখেছেন এ গ্রামের বাসিন্দারা।

১৯৮৩ সালের ১৬ নভেম্বর রানির সফরের পর থেকে ওই গ্রামের বাসিন্দারা বৈরাগীরচালাকে 'স্বনির্ভর গ্রাম' হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন এবং এখনো তা করেন। 

সেটি ছিল রানি এলিজাবেথের স্বাধীন বাংলাদেশে একমাত্র সফর। ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিলেন।

রানির আগমনের দিন বৈরাগীরচালা গ্রামে যে পুকুরে মাছ অবমুক্ত করা হয়েছিল, সে পুকুরটি এখন পানিশূন্য। ছবি: সংগৃহীত

বৈরাগীরচালা গ্রামের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন খান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান,  ১৯৮৩ সালে তার বাবা মিজানুর রহমান খানের বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখেছিলেন রানি এলিজাবেথ।

তিনি বলেন, '১৯৮৩ সালে গ্রামটি ছিল স্বনির্ভর গ্রাম। এলাকার মানুষের গোয়াল ভরা গরু-ছাগল, খামার ভরা মোরগ-মুরগী, পুকুর ভরা মাছ, ফসলি জমি, শাকসবজি-তরকারি ছিল। কোনো কিছুর অভাব ছিল না এ গ্রামের মানুষের। বাইরে থেকে কিছুই আমদানি করতে হতো না। মূলত এ দৃশ্য দেখতেই ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গ্রামটিতে এসেছিলেন।'

গ্রামের বৃদ্ধা সালেহা আক্তার (৭০) ওই সফরের কথা স্মরণ করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রামের কাঁঠাল বাগানে বসে স্থানীয় নারীদের সঙ্গে রানি গল্প করেছিলেন। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে প্রতীকী হিসেবে রানির হাতে একটি রূপার চাবি তুলে দেওয়া হয়েছিল। এর অর্থ ছিল যে কোনো সময় রানি বৈরাগীরচালা গ্রামে আসতে পারবেন। তার জন্য গ্রামের সব দরজা সর্বদা খোলা।'

বৈরাগীরচারা প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় শিক্ষক মাসুদ ইবনে মোবারক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রানি এলিজাবেথ বৈরাগীরচালা গ্রামে এসে যে পুকুরে মাছ অবমুক্ত করেছিলেন সে পুকুরটি এখন পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। পুকুরের পাড় ভেঙে যাচ্ছে। রাণীর আগমন উপলক্ষে বৈরাগীরচালা গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগসহ রাস্তা পাকা করা হয়। গ্রামে সে সময় প্রথমবার বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়, যার সুবাদে ওই গ্রামে এখন বেশ কয়েকটি কলকারখানা গড়ে উঠে।'

গ্রামের বাসিন্দা মো. চাঁন মিয়া (৭০) বলেন, 'রানিকে আমরা দেখেছি। রানির সঙ্গে বসে গল্প করেছি। তার কথা আমরা বুঝিনি তবে তার সঙ্গে থাকা লোকজন আমাদের বুঝিয়ে দিতেন। আমাদের ভাগ্য আমরা ব্রিটেনের রানিকে খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়েছি। তিনি পুকুর ঘুরে দেখেন, কুঁড়েঘর দেখেছেন। তিনি পুকুরে মাছ অবমুক্ত এবং মাছ ধরা দেখেছেন। হাতে ভাজা মুড়ি বানানো, গ্রামীণ শিল্পের নানা ধরনের উপকরণ তৈরির নমুনা দেখানো হয়। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।'

Comments

The Daily Star  | English

One killed in multi-vehicle crash on Dhaka-Mawa highway

The chain of crashes began when a lorry struck a private car from behind on the Mawa-bound lane

38m ago