‘চাঁদা’ না দেওয়ায় পদ্মায় মাছ ধরতে দেওয়া হচ্ছে না জেলেদের
পাবনা সদর উপজেলার ভবানীপুরে পদ্মায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় শতাধিক জেলে পরিবার। মাছ ধরাই যাদের পেশা। তারা এখন নদীতে মাছ ধরতে গেলে চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, জলাশয় ইজারার অজুহাত দেখিয়ে মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে ভয়-ভীতিও দেখানো হচ্ছে। জেলেদের কাছ থেকে মাছ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী জেলেরা এসব অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেছেন। পাশাপাশি, চাঁদা আদায় বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
ভবানীপুর গ্রামের মৎস্যজীবী শাহাদাৎ প্রামাণিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয় প্রভাবশালী খাদেমুলের নেতৃত্বে একদল মানুষ জেলেদের কাছ থেকে জোর করে টাকা নিচ্ছে।'
'নদীতে মাছ ধরতে হলে তাদের টাকা না দিলে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মাছ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ওদের ভয়ে অনেকেই নদীতে মাছ ধরতে পারছে না,' যোগ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী জেলেদের পক্ষে শাহাদাৎ পাবনা আমলি আদালত-১ এ অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে বলেন, গত ২৮ জুলাই বাঁশেরবাদা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন ও খাদেমুলের নেতৃত্বে একদল লোক তার কাছ থেকে মাছ বিক্রির সাড়ে ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে।
একই দিন রাতে মামলার সাক্ষী আরও ৬ জেলের কাছ থেকে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা, মাছ ছিনিয়ে নেওয়া ও আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আরও ১০ হাজার টাকা পরিশোধের হুমকি দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়।
খাদেমুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি মূল পদ্মা নদী নয়। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন বাঁশেরবাদা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিনের নামে জয়েনপুর মৌজার জলমহাল ইজারা দিয়েছে। এটা সেই জলমহালের অংশ।'
তার মতে, জলমহালের এ অংশে ইজারার টাকা পরিশোধের জন্য জেলেদের কাছে টাকা চাওয়া হলেও তারা তা না দিয়ে জোরপূর্বক জলাশয়ে মাছ ধরছেন, মিথ্যা দোষারোপ করছেন।
মৎস্যজীবীদের দাবি, জয়েনপুর মৌজা ঈশ্বরদী উপজেলার অন্তর্গত। তারা ইজারার জায়গা ছেড়ে নদীতে মাছ ধরতে জেলেদের বাধা দিচ্ছে।
ভবানীপুর গ্রামের মৎস্যজীবী শাহাবুদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাবনা সদর উপজেলার ভবানীপুর, ভগীরতপুর ও রতনপুর গ্রামের প্রায় শতাধিক মৎস্যজীবী প্রতিদিন নদী থেকে মাছ ধরে পাবনার বাজারে বিক্রি করছেন।'
মৎস্যজীবীরা ডেইলি স্টারকে জানান, তারা যুগের পর যুগ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রবাহমান নদী কখনো ইজারা দেওয়া হয়নি। অথচ ইজারার কথা বলে জোরপূর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে।
ইজারা গ্রহীতা আলাউদ্দিনের দাবি, সরকারি নিয়ম মেনেই নদীর কূল ও জলমহাল ইজারা নেওয়া হয়েছে। জেলেরা টাকা না দিলে ইজারার টাকা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে জেলেদের নামে প্রকৃত জেলে নয় এমন লোকজন মাছ ধরছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
পদ্মায় মাছ ধরতে বাধা ও চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদে মৎস্যজীবীরা নদীপারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। তারা দখলদারদের হাত থেকে নদী বাঁচানোর দাবিও জানিয়েছেন।
নদী ইজারার বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজমুস সাদাত রত্ন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রবাহমান নদী বা নদীর কূল ইজারা দেওয়া হয়নি, যদি না তা জলমহাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।'
'যখন কাউকে জলমহাল ইজারা দেওয়া হয় তখন চুক্তিতে চৌহদ্দি উল্লেখ করা থাকে। চাইলেই ইজারার কাগজ দেখিয়ে যেকোনো জায়গায় খাজনা নেওয়া যায় না।'
ভবানীপুর গ্রামের জেলেদের কাছ থেকে 'চাঁদা' আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, 'সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।'
Comments