পর্যটন প্রসারে অবকাঠামো-সেবার মান উন্নয়ন, মানসিকতা পরিবর্তনের সুপারিশ

ছবি: সংগৃহীত

পর্যটন সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, সেবার মান উন্নতকরণ, নিরাপত্তা বাড়ানো, আচরণ ও মানসিকতার পরিবর্তন এবং ইতিবাচক প্রচারণা অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে সব সংস্থার সমন্বয়ের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বাংলাদেশ পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি পর্যটন স্টক হোল্ডারের সমন্বয়ে দিনব্যাপী 'প্রিপারেশন অফ ট্যুারিজম মাস্টারপ্ল্যান ফর বাংলাদেশ' শীর্ষক কর্মশালায় এ তাগিদ দেন তারা।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, 'পর্যটনের প্রয়োজনীয় সবকিছু আমাদের দেশে আছে। কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৈকত। কিন্তু এখানে বিদেশি পর্যটক দেখা যায় না। আমাদের নৌপথকেন্দ্রিক ট্যুরিজম অবহেলিত, কিন্ত এটা হতে পারত আমাদের অন্যতম সেরা পর্যটনের জায়গা।'

'মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে। এখন ছুটি পেলেই তারা বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যান। যে কোনো পর্যটন স্পটে নান্দনিক ও ব্যবসায়িক দিকে নজর দিয়ে ছোটখাটো পরিবর্তন করলে তা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। এর সঙ্গে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা খুব জরুরি। মানসিকতার ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। হঠাৎ করে বেশি লাভের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে', বলেন তিনি।

মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিইটিএস কনসাল্টিং সার্ভিস লিমিটেডের ডেপুটি টিম লিডার প্রফেসর ড. নুরুল ইসলাম নাজিম বলেন, '২০২০ সালে ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ শুরু হয়। করোনার সময় কাজ এগোয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য ফ্যাসিলিটিজ ও সমস্যা চিহ্নিত করা, সমাধানের পথ এবং নতুন পর্যটনকেন্দ্র সামনে নিয়ে আসা।'

তিনি আরও বলেন, 'বিদেশি পর্যটক সংখ্যা খুব কম। কেন কম সেটা চিহ্নিত করা হবে। পর্যটন খাত এখনও সংগঠিত নয়। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশের সবচেয়ে বেশি পর্যটন স্পট আছে। তবে অবকাঠামো সংকট, ফ্যাসিলিটিজের অভাব থাকায় সেভাবে এগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না।'

আর্কিওলজিক্যাল ও হিস্টোরিকাল সাইট, ইকো ট্যুরিজম, তীর্থ ও ধর্মীয় কেন্দ্র ভিত্তিক, নদী কেন্দ্রিক, অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড স্পোর্টস, বিচ ট্যুরিজম, কমিউনিটি বেজড, ক্রুজ (সাগর ও নদীতে), রুরাল এবং এমআইসিই ট্যুরিজম (মিটিং, ইনসেনটিভ, কনফারেন্স এন্ড এক্সিবিশনসসহ সারাদেশের বিদ্যমান ও নতুন চিহ্নিত পর্যটন স্পটগুলোকে ১০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ট্যুরিস্ট পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন বলেন, 'গত ২ বছর ডমেস্টিক ট্যুরিজম কয়েক গুণ বেড়েছে। করোনায় মানুষ বিদেশ যেতে পারেনি,  তারা দেশে ঘুরেছে। ঠিক মত এগিয়ে নিলে  এ খাত অনেক বিকশিত হবে। কারণ সব সম্ভাবনা আমাদের আছে। কাজে লাগাতে পারলে পর্যটনে বাংলাদেশ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার সমকক্ষ হতে পারে।'

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'পর্যটন খাতে বিনিয়োগে মূল ভূমিকা নিতে হবে বেসরকারি খাতকে। কারণ এই খাতে সরকার একা কিছু করতে পারবে না। সরকার সড়ক অবকাঠামো, নিরাপত্তা ও নীতি সহায়তা দিতে পারবে। দেশের সব জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে এই মহাপরিকল্পনা করতে হবে।'

'চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ এবং মহেশখালীর আদিনাথ— এ দুটি স্থানে ভারত ও নেপাল থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন। সেখানে তাদের থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। এটা অবশ্যই করতে হবে। যদি বেসরকারি উদ্যোগে ভালো মানের হাসপাতালের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে উপমহাদেশের অনেক মানুষ আসবে। মেডিকেল ট্যুরিজমের প্রসার হবে।'

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চট্টগ্রামে ২৬৭টি পর্যটন স্পট চিহ্নিত হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ৬৯টি ইকো ট্যুরিজম, ৬০টি তীর্থ ও ধর্মীয় কেন্দ্র ভিত্তিক এবং ৩৩টি আর্কিওলজিক্যাল ও হিস্টোরিকাল সাইট।

Comments

The Daily Star  | English

Chattogram’s garment factories fear fallout from US tariffs

Owners of Chattogram-based readymade garment factories, many of which do business with buyers in the United States, are worried about a US tariff hike to 35 percent set to take effect on August 1.

12h ago