‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছাড়া শ্রমিকরা কাজে ফিরবে না’

চা-শ্রমিক
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

'শেখ হাসিনা আমাদের মা। আমরা শুধু মাকেই ভোট দিই। এই সংকটকালে আমরা শুধু তার কথা শুনতে চাই। করোনার ঝুঁকির সময় সবকিছু বন্ধ ছিল তখনও শুধু মায়ের কথায় আমরা বাগানে কাজ করেছি। ঠিক সেইভাবেই আমরা আবার মায়ের কথাতেই কাজে যোগ দেবো।'

দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের চানপুরে আন্দোলনে আসা চা-শ্রমিক কশৈল্লা ঘাটুয়াল।

আক্ষেপের সুরে তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু, মাতো হামদের দেখতেও নাই আসছে। মা কথাও নাই বইলছে। শুধু মাসিকে পাঠাই দিচ্ছে। হামরা মায়ের কথা শুইনতে খুইজছি।'

তার মতে, পঞ্চায়েত কমিটি থেকে শুরু করে ভ্যালি ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সমন্বয়ের অভাবের কারণে প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বৈঠক ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

চা-শ্রমিক
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

তিনি মনে করেন, সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে ভ্যালি কিংবা কেন্দ্রীয় নেতাদের যোগাযোগ নেই বললেই চলে। শ্রমিকরা কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না।

সিলেট নগরীর উপকণ্ঠে দেশের প্রথম চা-বাগান মালনীছড়ার শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সহসভাপতি সাধনা কালোয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল বিকেলে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি না খেয়ে মরলেও দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিভিতে ৩০০ টাকা মজুরি নির্ধারণের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ দেবো না। প্রয়োজনে আরও আন্দোলন চলবে।'

চা-শ্রমিকরা ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের আন্দোলন শেষ হয়েও যেন হচ্ছে না। দফায় দফায় সমঝোতা বৈঠক শেষে নেতারা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও সাধারণ শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

চা-শ্রমিক
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

তাদের অভিযোগ, অতীতে চা-বাগানের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের 'আশ্বাসে' বিশ্বাস রেখে প্রতারিত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে সরাসরি বা ভার্চুয়ালি আশ্বাসবাণী শোনার অপেক্ষায় আছেন।

সর্বশেষ গত রোববার রাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠকেও কোনো সমাধান হয়নি। একই সময় মৌলভীবাজারে জেলা প্রশাসক কার্যালয়েও বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ভোররাত ৩টার দিকে 'প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও সম্মান' রেখে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বানে চা-শ্রমিক নেতারা সাড়া দেন।

এমনকি সদ্য নির্ধারিত ১৪৫ টাকার বদলে আগের ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তেও সম্মতি দেন নেতারা।

পাশাপাশি, শারদীয় দুর্গাপূজার আগে দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনের জন্য শ্রমিক নেতারা অনুরোধ করেন।

আশ্বাস পেয়ে কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা কাজে ফিরলেও বেশিরভাগ শ্রমিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে শনিবার রাতের বৈঠকের পর নেতারা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও সাধারণ শ্রমিকরা ধর্মঘট অব্যাহত রাখেন।

চা-শ্রমিক
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

'চা-বাগান মালিকরা শ্রমিকদের যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলেন, তা কাল্পনিক' উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ কৈরি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিসংখ্যান দিয়ে একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৪০২ টাকা দেওয়ার হিসাব ভাওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়।'

মৌলভীবাজারে ৯২, হবিগঞ্জে ২৪ ও সিলেটে ২২টি চা-বাগানের পাশাপাশি এর অধীন বেশ কয়েকটি ফাঁড়ি বাগানও আছে। গত ১৩ আগস্ট থেকে সেসব বাগানের শ্রমিকরা প্রতিদিন ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচিও পালন করছেন।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পালের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হবিগঞ্জের এক শ্রমিক নেতা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অতীতে সাধারণ শ্রমিকদের দাবি পূরণে নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন।'

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা চা-শ্রমিকদের ভোটে নির্বাচিত। আমরা তাদের সঙ্গে আছি ও থাকবো। সংকট নিরসনে বৈঠকে বসেছিলাম। সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছাড়া শ্রমিকরা কাজে ফিরবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

11h ago