চট্টগ্রাম শহরে পোস্টার সাঁটানোর ১১৬ স্থান, না মানলে জরিমানা
চট্টগ্রাম নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পোস্টার সাঁটানোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে যারা নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে পোস্টার সাঁটাবেন, তাদের জরিমানা করা হবে।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানা গেছে চসিক সূত্রে।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিংমল এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে নির্বিচারে পোস্টার সাঁটানোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চসিক কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানান চসিক সূত্র।
বন্দরনগরীর সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের শিক্ষার্থী শায়লা আক্তার বলেন, 'মহসিন কলেজ ও সংলগ্ন চট্টগ্রাম কলেজের সীমানা দেয়াল পোস্টারে ভরে গেছে। এ কারণে দেয়ালগুলো বিশ্রি রূপ নিয়েছে।'
কলেজ দুটিসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ প্রতিবেদক অভিযোগের সত্যতা পান। চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে পোস্টার সাঁটানো দেখা গেছে।
যোগাযোগ করা হলে চসিক-এর উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পোস্টারগুলো মধ্যরাতে সাঁটানো হয়। পরিচ্ছন্নকর্মীরা ভোরবেলা রাস্তা পরিষ্কার করতে গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে সাঁটানো পোস্টার তুলে ফেলে। কিন্তু একই ঘটনা পরের দিন রাতে আবারও ঘটে।'
তিনি বলেন, 'সেপ্টেম্বর মাস থেকে অবৈধভাবে পোস্টার সাঁটানোর জন্য জরিমানা করতে যাচ্ছে চসিক।'
চসিক সূত্র জানায়, গত ১৪ আগস্ট চসিক-এর অভ্যন্তরীণ সভায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী পোস্টার সাঁটানোর জন্য নির্দিষ্ট স্থানে কিছু স্টিল স্ট্রাকচার নির্মাণের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন এবং মেয়র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পোস্টার সাঁটার জন্য একটি ফি নির্ধারণ করার নির্দেশনাও দেন।
চসিক মেয়রের ব্যক্তিগত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, 'কিছু কর্মকর্তা একটি পোস্টার সাঁটানোর জন্য প্রতিদিন ১০ টাকা ফি নির্ধারণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু অন্যরা এই ফি বেশি বিবেচনায় একটি যৌক্তিক স্তরে ফি নির্ধারণের জন্য যুক্তি দেন। মেয়র মহোদয় কর্মকর্তাদের একটি যৌক্তিক ফি নির্ধারণ করতে নির্দেশ দেন।'
নির্ধারিত স্থানে ১২ ফুট বাই ৮ ফুটের ইস্পাত-কাঠামো স্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
সভায় পোস্টার সাঁটানোর জন্য মোট ১১৬টি স্থান নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে উল্লেখ করে হাসেম বলেন, 'মেয়র প্রাথমিকভাবে ৭০টি স্থানে কাঠামো স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।'
শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এটি একটি ভালো উদ্যোগ বলে অভিহিত করা সত্ত্বেও নগরবাসীদের অনেকেই উদ্যোগটির সাফল্য সম্পর্কে শঙ্কিত। তাদের একজন স্কুলশিক্ষক মাসুদ পারভেজ বলেন, 'এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে, এর সাফল্য সম্পর্কে সন্দিহান।'
তিনি বলেন, '১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে চসিক এর তৎকালীন মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং পোস্টার সাঁটানোর জন্য কিছু স্থান নির্ধারণ করেছিলেন। মেয়রের এই উদ্যোগকে নগরবাসী স্বাগত জানিয়েছিল কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে কিছুদিন পর নগরীর দেয়ালগুলো আবার পোস্টারে ছেয়ে যায়।'
যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'যারা নগরীতে পোস্টার সাঁটাচ্ছেন তাদের মনে হয় নান্দনিক বোধ ও সাধারণ জ্ঞান নেই; তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের দেয়ালসহ অন্যত্র নির্বিচারে পোস্টার সাঁটাচ্ছেন।'
'আমরা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই এবং তাই আমরা পোস্টার সাঁটানোর জন্য স্থান নির্ধারণ করতে যাচ্ছি এবং যারা নিয়ম লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হবে', বলেন তিনি।
উদ্যোগের সফলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, 'জনস্বার্থে আরোপিত যেকোনো নিয়মের সফলতার চাবিকাঠি হচ্ছে জনসচেতনতা।'
Comments