নতুন ভোটার তালিকা তৈরিতে সময় লাগবে ১০ মাস
একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পর্কে এ মাসের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। দ্রুত সময়ে নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চাপও বাড়ছে।
নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পারে, সাধারণত প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার মাধ্যমে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে, নির্বাচন কমিশন বর্তমানে কার্যকর না থাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
ড. ইউনূসকে জানানো হয়েছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথম ধাপ হবে যথাযথ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। এর জন্য নয় থেকে ১০ মাস সময় লাগতে পারে।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ভোটার তালিকা তৈরি হতে পারে।
তথ্য সংগ্রহের জন্য কমপক্ষে এক মাস, নিবন্ধন করতে সাত থেকে আট মাস, খসড়া তালিকার জন্য ১৫ দিন এবং ভোটারদের মতামত ও আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য আরও ১৫ দিন সময় লাগবে।
এই প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে এবং কমিশন গঠনের জন্য প্রয়োজন হবে সার্চ কমিটি। গতকাল এই সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রণয়ন, তত্ত্বাবধান, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২ অনুযায়ী, কমিশন নিয়োগে গঠিত সার্চ কমিটির সচিবালয় হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কাজ করবে।
গতকাল দুপুরে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, 'আপনাদেরকে আমি একটি বিষয় বলতে পারি, আমাদের সরকারের নির্বাচনমুখি যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন হয়ে গেছে। আমি যতদূর জানি, প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন সই করে দিলেই আজ-কালের মধ্যে আপনারা এটি জানতে পারবেন। সার্চ কমিটি হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।'
এরপর রাতে ঘোষণা আসে, হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন গঠনে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আসিফ নজরুল আরও বলেছিলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন হয়ে গেলে 'এরপর ভোটার তালিকা করা হবে।'
বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ, যার মধ্যে পুরুষ প্রায় ছয় কোটি ২১ লাখ, নারী পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৯৩২ জন।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার একটি স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একটি নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করতে চায়।
ভোটার তালিকা আইন-২০০৯ অনুযায়ী, প্রতি বছর এই তালিকার হালনাগাদ করা হয়। তবে, জনগণের চাহিদার বিবেচনায় ভিন্ন পথে হাঁটতে চাইছে সরকার।
ভোটার তালিকা আইন-২০০৯ অনুযায়ী, প্রতি বছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চের মধ্যে এই বার্ষিক হালনাগাদ বাধ্যতামূলক। তবে, বিশেষ সংশোধনের এখতিয়ার রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
সে হিসাবে, আগামী বছরের ২ মার্চের মধ্যে হালনাগাদ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করতে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
২০২২ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য ১৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
Comments