২২ কোটি টাকা ঋণ কাদের সিদ্দিকীর, আরও যা আছে ৩ ভাইয়ের হলফনামায়

লতিফ সিদ্দিকী, কাদের সিদ্দিকী ও মুরাদ সিদ্দিকী। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের আলোচিত সিদ্দিকী পরিবারের তিন ভাই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার পৃথক তিনটি আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম এবার নিজ দল থেকে টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর), তার বড় ভাই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) এবং ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন।

কাদের সিদ্দিকীর ঋণ ২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা: বাৎসরিক আয় ১০ লাখ

আব্দুল কাদের সিদ্দিকী এবার নিজ দল থেকে টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে প্রার্থী হয়েছেন। জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে দেওয়া হলফনামায় বাৎসরিক ১০ লাখ টাকা আয়ের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। ব্যাংকে তার ঋণ আছে ২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

আয়ের মধ্যে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা কৃষিখাত, ৪ লাখ টাকা বাড়ি/দোকান/অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া, শেয়ার/সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত (সুদ) ১৩ হাজার টাকা এবং পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শক ইত্যাদি) থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

সোনার বাংলা প্রকৌশল সংস্থা (প্রা.) লি. এর চেয়ারম্যান/ম্যানেজিং ডিরেক্টর/ডিরেক্টর হিসেবে অগ্রণী ব্যাংক টাঙ্গাইল শাখায় মোট ২১ কোটি ৮০ লাখ ৩১ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে তার, যা গত ২৬ নভেম্বর পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

হলফনামায় তিনি কোনো স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ করেননি।

হলফনামা অনুযায়ী বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইন, গণপ্রনিধিত্ব আদেশ এবং দণ্ডবিধিতে মোট চারটি মামলা বিচারাধীন আছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সখীপুরে ছিল আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীর সদর দপ্তর। সখীপুর ও বাসাইল উপজেলা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসন থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৮ এর নির্বাচনে পরাজিত হন। ঋণ খেলাপি হওয়ায় ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তার মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকী ২০১৮ এর নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন।

নিজের বাড়ি নেই লতিফ সিদ্দিকীর, নগদ আছে ৭ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ৩ লাখ

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবারের নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। জেলা নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী তার নিজের কোনো বাড়ি বা এপার্টমেন্ট নেই। কালিহাতীতে স্ত্রীর নামে একটি রয়েছে তাও সেটি আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের দ্বারা নির্মিত।

লতিফ সিদ্দিকী এই আসনটি থেকে ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি ২০০৮ ও ২০১৪ নির্বাচনের পর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে ২০১৪ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে মন্ত্রিত্ব হারান তিনি।

তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন গাজীপুরের কাউলটিলায় তার ১ দশমিক ৮৭ একর জমি আছে যার মূল্য ৬৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া গ্রামের বাড়ি ছাতিহাটিতে তার ৩৯ শতাংশ পতিত জমি আছে যার মূল্য ৩২ হাজার টাকা। 

তিনি বছরে ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ভাতা পান। নগদ ৭ লাখ আর ব্যাংকে ৩ লাখ টাকা জমা আছে এবং ৬৫ লাখ টাকা দামের একটি টয়োটা গাড়ি আছে তার। তবে ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো দায়-দেনার তথ্য উল্লেখ করেননি তিনি।

হলফনামা অনুযায়ী তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য লায়লা সিদ্দিকীর নামে ঢাকায় ৬ কাঠা, কালিহাতীতে ৭ শতাংশ এবং কালিহাতীতে আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের দ্বারা নির্মিত একটি দালান/আবাসিক স্থাপনা রয়েছে। এছাড়া বিয়ের সময়ে পাওয়া ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে লায়লা সিদ্দিকীর।

তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে দায়ের করা একটি মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন লতিফ সিদ্দিকী।

একটি বাদে সব মামলায় খালাস মুরাদ সিদ্দিকী, বাৎসরিক আয় ৪৯ লাখ টাকা

কাদের সিদ্দিকী ও লতিফ সিদ্দিকীর ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী এবারও টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী পেশায় ঠিকাদার মুরাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দণ্ডবিধি, জননিরাপত্তা আইন, জরুরি ক্ষমতা অধ্যাদেশ এবং দুর্নীতি দমন আইনে মোট ২৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সদর থানায় ২০০৩ সালে দায়ের করা একটি হত্যা মামলা বাদে বাকি ২৪টি মামলাতেই অব্যাহতি অথবা খালাস পেয়েছেন তিনি।

মুরাদ সিদ্দিকী ইতোপূর্বে এই আসনে চারবার নির্বাচন করেও বিজয়ী হতে পারেননি। চারবারের মধ্যে একবার তিনি বড় ভাই কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। অন্যগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি।

হলফনামায় মুরাদ উল্লেখ করেছেন, ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৩ টাকা।

স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ৩ একর সাড়ে ৬ শতাংশ কৃষি জমি এবং ৬০ শতাংশ জমির ওপর পৈত্রিক বাড়ি। স্ত্রীর নামে আছে টাঙ্গাইলে ৭২ শতাংশ জমি এবং ঢাকার গুলশানে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট।

তিনি অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নিজ নামে নগদ দেখিয়েছেন ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ১০০ টাকা, স্ত্রীর নামে রয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৭৩ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা আছে ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৮১০ টাকা, স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৬ টাকা। মুরাদের ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দামের একটি গাড়ি এবং স্ত্রীর ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের একটি গাড়ি আছে। দুজনের স্বর্ণ আছে মোট ৬৪ ভরি।

 

Comments

The Daily Star  | English

'State intelligence agency' is attempting to form political party, Rizvi alleges

Doubts are growing as to whether there are subtle efforts within the government to weaken and break the BNP, he also said

3h ago