পেশায় ব্যবসায়ী-শিল্পী, কিন্তু তা থেকে ‘আয় নেই’ মমতাজের

মমতাজ বেগম
মমতাজ বেগম। ছবি: সংগৃহীত

হলফনামায় নিজেকে পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও কণ্ঠশিল্পী উল্লেখ করলেও, তা থেকে কোনো আয়ের কথা উল্লেখ করেননি মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মমতাজ বেগম। 

তবে গত পাঁচ বছরে তার আয় বেড়েছে ১০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ১৬ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ বাড়লেও এক কোটি ২৫ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ কমেছে। 

২০১৮ সালের একাদশ ও এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মমতাজের জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানা গেছে।

এবার তার নামের পাশে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভারতের দুই আদালতে করা পৃথক দুটি মামলা।

সিংগাইর, হরিরামপুর ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তিন ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হন। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 

নবম শ্রেণি পাস মমতাজ বেগম হলফনামায় তার পেশা হিসেবে 'ব্যবসা ও শিল্পী' উল্লেখ করেছেন।

আয় বেড়েছে

২০১৮ সালের ও এবারের হলফনামা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট অথবা অন্যান্য ভাড়া, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত, কৃষি ও অন্যান্য খাত থেকে মমতাজের বার্ষিক আয় এখন ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৮ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার ২৭৬ টাকা। সেই হিসাবে গত পাঁচ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৬১২ টাকা।

কিন্তু, আয়ের উৎসের ছকের পাঁচ নম্বর অংশে পেশা হিসেবে থাকা 'শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শক' ইত্যাদি থেকে সাত লাখ টাকা আয়ের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তার সর্বোচ্চ আয় দেখানো হয়েছে সংসদ সদস্য ভাতা ও আনুষঙ্গিক পারিতোষিক ২৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় দেখানো হয়েছে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া হিসেবে পাওয়া ১০ লাখ ৮২ হাজার ৯৯৭ টাকা।

অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে

হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সংসদ সদস্য মমতাজের ১৫ লাখ ৯২ হাজার ২৭১ টাকার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। নগদ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, স্বর্ণ, যানবাহন, আসবাবপত্র অন্যান্য বাবদ তার অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ছয় কোটি ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭১৮ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল  ছয় কোটি ৫৯ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৭ টাকা। এ হিসাবে গত ৫ বছরে তাঁর  অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য বেড়েছে  ১৫ লাখ ৯২ হাজার ২৭১ টাকা। তিনি এই অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তিনি তার নামে মধু উজালা কোল্ড স্টোরেজের শেয়ার হিসেবে তিন কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ৪৫ টাকার টাকার সঞ্চয়পত্র, এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের তিনটি গাড়ি, ৫০ তোলা স্বর্ণের মূল্য ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, তিন লাখ ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ও আড়াই লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী দেখিয়েছেন।

এছাড়া স্বামীর নামে নগদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা, আট লাখ টাকার ব্যক্তিগত গাড়িসহ ৩০ লাখ টাকা এবং মধু উজালা কোল্ড  স্টোরেজের শেয়ার হিসেবে ২১ লাখ ৯২ হাজার টাকা করে তিন সন্তানের নামে মোট ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা রেখেছেন।

কমেছে স্থাবর সম্পদ

হলফনামায় প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৮ সালে মমতাজ বেগমের নামে ছিল ৪৪ লাখ দুই হাজার ৭৩৪ টাকা মূল্যের ৯০০ শতাংশ কৃষি জমি। এখনো তাই আছে। তার নামে ২০১৮ সালে এক কোটি ২৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৭০ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ছিল। এখন তা কমে হয়েছে ৫০০ শতাংশ। যার মূল্য ৫৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭৭০ টাকা। রাজধানীর মহাখালীতে ছয় কোটি ৯৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের পাঁচতলা বিশিষ্ট বাড়ি ও মানিকগঞ্জের সিংগাইরের জয়মন্টপে ৫৭ লাখ পাঁচ হাজার ৪৪০ টাকা মূল্যের একটি দুইতলাবিশিষ্ট বাড়ি ছিল। এখনও তা রয়েছে।

সবমিলিয়ে, ২০১৮ সালে স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯০৮ টাকার যা এখন হয়েছে ১১ কোটি ৩৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৪৪ টাকার। কমেছে  এক কোটি ২৫ লাখ তিন হাজার ৪৬৪ টাকার স্থাবর সম্পদ।

কমেছে দায়

২০১৮ সালের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে তিন কোটি ২৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং মধুমতি ব্যাংকে সাত লাখ ৬৫ হাজার ৪৬৪ টাকা মিলে মোট তিন কোটি ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৪৬৪ টাকার দায় ছিল। এই দায় এবার কমে হয়েছে দুই কোটি ৮১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এখন এই টাকার দায় রয়েছে শুধু ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ নামের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে।

ভারতের আদালতে দুই মামলা

২০১৮ সালের হলফনামায় কোনো মামলার কথা উল্লেখ না থাকলেও, এবারের হলফনামায় মমতাজ দুটি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। 

একটি ভারতের কলকাতা হাইকোর্টে, অন্যটি ভারতের বহরমপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে। হাইকোর্টের মামলাটি ৪৮২ সিআরপিসি ও অন্য মামলাটি ৪২০/৪০৬/৩৮৪/৫০৬আইপিসি ধারায় হয়েছে। হাইকোর্টে শুনানির জন্য এবং অন্যটি সাক্ষীর জন্য স্থগিত হয়ে আছে।
 

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

1h ago