স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থনকারীকে অপহরণের অভিযোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিওর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য সমর্থনকারী হিসেবে সই করা এক ভোটারকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় আজ শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই প্রার্থী।
একই আসনের সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) আবু মুসা আনসারী ওই সমর্থনকারীকে অপহরণ করেছেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের খালকাটা নামক স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিওর সমর্থনকারীদের মধ্য থেকে এক শতাংশ ভোটারের সই করা একটি তালিকা সংসদ সদস্যের এপিএস আবু মূসা আনসারী ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল।
অভিযোগকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও এবং অভিযুক্ত মূসা আনসারী দুজনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা।
ফিরোজুর রহমান ওলিও টানা ২৬ বছর ধরে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং গত চার বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে আবু মূসা আনসারীর নির্দেশে সংরক্ষিত আসনের সাবেক নারী সদস্য শাহনাজ বেগমের ছেলে শেখ অবুজসহ ৭-৮ জন যুবক ছুরি ঠেকিয়ে ফিরোজুর রহমানের কর্মীদের কাছ থেকে সমর্থনকারী এক শতাংশ ভোটারের সই করা তালিকার মধ্য থেকে আড়াইশ জনের তালিকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। সমর্থনকারী ভোটারের স্বাক্ষরপত্রে সই করা সুলতানপুর ইউনিয়নের টানচর গ্রামের বাসিন্দা মীর বাইজিদ হোসাইনকে মূসা আনসারীর লোকজন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। সেখানে নিয়ে জোরপূর্বক তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি ও সই আদায় করা হয়। ওই রাতেই পুলিশী হেফাজতে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আজ শনিবার তাকে আবারও বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অন্য কোথাও আটকে রেখেছে মূসার লোকজন। বাইজিদ হোসাইনের পরিবার আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পায়নি বলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমানকে জানিয়েছে।
নির্বাচনের আগে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইকালে এমন কর্মকাণ্ডকে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান বলেন, 'এই কর্মকাণ্ডের কারণে আমার সমর্থক ও নেতাকর্মীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এই অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থার নেওয়ার জন্য নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।'
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি আরও বলেন, 'আমার সমর্থনকারী ভোটারের স্বাক্ষরপত্রে যারা সই করেছেন, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের নামে মামলা দেওয়ার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। শতশত ছাত্রলীগের ছেলেরা আমার সঙ্গে কাজ করা কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখাচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এসব বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।'
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু মূসা আনসারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এই ছেলেকে অপহরণ করতে যাবো কেন? এই ছেলে তো আমারই প্রতিবেশি, ভাতিজা। ছেলেটা তো ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কিছু লাগে না। এরপরেও তিনি (স্বতন্ত্র প্রার্থী) এ ধরণের অভিযোগ আনবেন কেন? আমিও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারি।'
অভিযোগ জমা পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রার্থীরা অনুসন্ধান কমিটির নির্ধারিত বাক্সে অভিযোগ জমা দেন। জমা দেওয়ার পরদিন আমরা সেগুলো খুলে দেখি। এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কি না, সেটা আগামীকাল বলা যাবে।'
Comments