‘পঞ্চদশ সংশোধনীর পর ২০১৪ সাল থেকে যে সরকার চলছে তা অসাংবিধানিক’

আলোচনা সভায় সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

অর্থনীতিবিদ, উন্নয়নকর্মী এবং স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর পর ২০১৪ সালের নির্বাচনে যে সরকার এসেছে তা এখনো টিকে আছে এবং এটা অসাংবিধানিক।

আজ মঙ্গলবার ঢাকায় দৃকপাঠ ভবনে আয়োজিত 'আবারো সাজানো নির্বাচনঃ নাগরিক উৎকণ্ঠা' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির আয়োজনে আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনীতি-বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল।

আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'আমাদের বোধে আনতে হবে জালিয়াতির মাধ্যমে আসা বর্তমান সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৪ সালে আমাদের মাথায় আসেনি। তখন সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে যে সরকার এসেছে তা এখনো টিকে আছে এবং এটা অসাংবিধানিক।'

তিনি বলেন, 'এখন যে নির্বাচনের পরিকল্পনা হচ্ছে তা শুধু নিয়ন্ত্রিত বা সাজানো নির্বাচন নয়, তা একতরফা নির্বাচন। সঠিক, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে ভোটার বেছে নেওয়ার সুযোগ, যথার্থ বিকল্প ও বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দরকার।'     

ড. আসিফ নজরুল তার বক্তব্যে বলেন, 'বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে নির্বিচারে মামলা দায়ের, বিচারিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সাজা দেওয়া ও নির্যাতনের মাধ্যমে সরকার দুটি লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছে। এক, নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় বিএনপির অংশগ্রহণের সুযোগ রুদ্ধ করা এবং দুই, সাজানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের শক্তিকে ধূলিসাৎ করা।'

'এ কাজে পুলিশ, জনপ্রশাসন, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে সরকার। নির্বাচনের এই আয়োজন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের চেয়েও নগ্ন, বেপরোয়া ও উদ্ধত,' যোগ করেন তিনি।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, 'এই নির্বাচনের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট ঘনীভূত হবে, এর সমর্থনকারী দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে নানাভাবে আরও বেশি অন্যায্য সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পাবে।'

আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম বলেন, 'আজকের আয়োজন দেশের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। সভায় নাগরিক সমাজের পাশাপাশি দেশের নবীন সমাজের পক্ষ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা আছেন যারা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন করেছেন। দেশের নাগরিক হিসেবে চলমান পরিস্থিতিতে সবার ভূমিকা রাখা প্রয়োজন এবং তার জন্যই আজকের এই আয়োজন।'

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ বলেন, 'নির্বাচনকালীন সরকার আমাদের মনঃপুত না হলেও, নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে শক্তিশালী। তাদের উচিৎ অনৈতিক ও অযৌক্তিকভাবে যাদের রাজবন্দী হিসেবে আটকে রাখা হয়েছে তাদের মুক্তি দেওয়া, যেন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হতে পারে। নির্বাচনী তফসিল পুনঃনির্ধারণ করা, কেননা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে নির্বাচন মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। গণতন্ত্র মানে আলোচনা এবং সুসংগঠিত হয়ে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ।'

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, 'সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশের সময়ে গেটে আমার গাড়ি থামানো হয়, গাড়িতে সুপ্রিম কোর্টের পরিচয় সংবলিত স্টিকার থাকা সত্ত্বেও। আমার গায়ে আইনজীবীর কালো গাউন থাকার পরেও আমাকে চেক করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। জুনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, নিরাপত্তার নামে তাদের কাগজপত্র-পোশাক সব পরীক্ষা করা হয়। এটা শুধু সুপ্রিম কোর্টের অবস্থা নয়। সারাদেশেই হয়ত একই অবস্থা। বিজিবি, আনসার, পুলিশ, র‍্যাব সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলিয়ে ১০-১২ লাখের মতো প্রায়। এরশাদের আমলেও এত সংখ্যক ছিল না। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি।'

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, 'বাংলাদেশের সব মানুষ উদ্বিগ্ন। বর্তমানে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে মুখোশ পড়ে বাড়ি বাড়ি হামলা করা হচ্ছে, পুলিশ কিছু করছে না, কোনো মামলা হচ্ছে না। ২৮ অক্টোবরের পর সব শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো দেখে মনে হচ্ছে আগে থেকে ধাপে ধাপে পরিকল্পিত ছিল যেন কেউ কোনো কথা না বলতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার সবসময় বলছে তারা খুবই জনপ্রিয় এবং জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। তাহলে তাদের এমন একটি অবস্থা তৈরি করা উচিৎ যেন জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দের সঙ্গে ভোট দিতে পারে, নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়, আদালত-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখতে পারে। মিথ্যাচার ও প্রতারণা না করে সরকার যদি নির্বাচিত হয়ে আসে তাহলে কারও কোনো অসুবিধা থাকবে না।'

নারী আন্দোলন কর্মী ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরিন হক বলেন, 'আমরা পুরো দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, নির্বাচন তার একটি ছোট অংশ। সরকারের সংলাপ নিয়ে ধারাবাহিক উপেক্ষা দেখে বোঝা যায় একতরফা নির্বাচনের মানসিকতা তাদের অনেক আগে থেকেই ছিল। তাদের এই পরিকল্পনা দেখে আমরা ভীত, আমাদের তরুণ সমাজ হতাশাগ্রস্ত। আমাদের বুঝতে হবে দেশটা আসলে কারা চালাবে, হেলমেট বাহিনী, নাকি যারা কোটা আন্দোলনে লড়াই করেছে? এ প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।'      

আলোচনাসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, সামাজিক আন্দোলনের কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh’s population hits 175.7 million, majority of working age

Bangladesh's population has reached 175.7 million, two thirds of which, around 115 million, are of working age, between 15 to 64..The estimation was made by the United Nations Population Fund's (UNFPA) annual flagship publication, the State of World Population (SWOP) 2025..UNFPA Repr

44m ago