আজমতের আশা আর জায়েদার শঙ্কা,আজ রায় দেবেন গাজীপুরবাসী

আজমত উল্লা খান ও জায়েদা খাতুন। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুরে মোট ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৮০ হাজারের কাছাকাছি। আজ বৃহস্পতিবার এই মহানগরে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে যে ভোট হতে হচ্ছে, তাতে সুষ্ঠু ভোটের ব্যাপারে শুরু থেকেই আশাবাদ ব্যক্ত করে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান।

বিপরীতে প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই আশঙ্কার কথা বলে আসছেন আজমত উল্লার প্রধান ২ বিরোধী স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও রনি সরকার। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অবস্থানে অটল থাকায় প্রার্থী দেয়নি বিএনপি।

এদিকে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশা-শঙ্কার দোলাচলের কথা জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররাও। এমন পরিস্থিতিতে গাজীপুর সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর বেছে নিতে বৃহস্পতিবার ভোট দেবেন তারা।

নির্বাচন সামনে রেখে ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে গাজীপুর নগর। যদিও কোথাও ২ স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও রনি সরকারের কোনো পোস্টার চোখে পড়েনি।

নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। এদিন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটান। দিনের পুরোটা সময় ভোট চেয়ে প্রতীকের পরিচিতি জানিয়ে প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং করা হয়।  

সে তুলনায় গতকাল বুধবার ভোটের আগের দিনটা ছিল অনেক নিস্তরঙ্গ। পথে-ঘাটে প্রার্থী কিংবা তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল না। বরং এদিন দুপুর থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে ইভিএমসহ ভোটের বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম বুঝে নিতে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তৎপর দেখা যায়।

গতকাল দুপুর ১টা থেকে একযোগে গাজীপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বর, শহরের কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা এসব সরঞ্জাম নেন। আর পথে পথে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভোটকেন্দ্রে। ছবি: আনিসুর রহমান

প্রতি কেন্দ্রের জন্য বিতরণ করা এসব সরঞ্জামের মধ্যে ছিল ইভিএম, অমোচনীয় কালি, ভোটার তালিকা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ভ্যাসলিন, মখমলের কাপড়, টিস্যু পেপার, বুথ কক্ষ নির্মাণের জন্য কাপড়, স্ক্রু-ড্রাইভার, মাল্টিপ্লাগসহ ৪৬ ধরনের সামগ্রী।

আজমত উল্লার আশাবাদের বিপরীতে জায়েদা-রনির শঙ্কা

গাজীপুর সিটির নতুন জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে ভোট দেবেন পৌনে ১২ লাখের বেশি ভোটার। নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডের ৪৮০টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।

মঙ্গলবার প্রচারের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে কোনো গণসংযোগে দেখা যায়নি। তবে এদিন সকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'নির্বাচন অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে।'

একইসঙ্গে ভোটার উপস্থিতিও আশানুরূপ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'নির্বাচনে মানুষ তাদের মনের মতো প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে আছে।'

একইদিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে শঙ্কার কথা জানিয়ে বিএনপির বর্জনের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা গাজীপুরের প্রভাবশালী বিএনপি পরিবারের সন্তান রনি সরকার সাংবাদিকদের বলেন, 'ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।'

একইসঙ্গে ভোটের দিন 'নৌকার প্রার্থীরা কেন্দ্র দখলের পাঁয়তারা করছে' বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি গণসংযোগের সময় বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতকর্মীদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগও তোলেন তিনি।

এদিকে গতকাল সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমাদের প্রচার-প্রচারণার দায়িত্বে থাকা লোকজন এবং আমাদের প্রত্যেক এজেন্টের বাড়িতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গিয়ে হয় তাদের ধরে নিয়ে গেছে অথবা তারা যেন বাড়িতে থাকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেছে। যাদের ধরে নেওয়া হয়েছে তাদেরকে গাজীপুরেই রাখা হয়নি। আশপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় তাদের নামে মামলা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে।'

ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসন — দুদিক থেকেই চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'যারাই প্রকাশ্যে আমার নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করছে তাদেরকেই প্রশাসনের লোকজন হুমকি দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমাদের সাধারণ সমর্থক এবং যারা দায়িত্ব নিয়ে আমাদের পক্ষে কাজ করছেন, তাদেরকে খুবই হেনস্তা করা হচ্ছে।'

এর বাইরে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা বলেন সাধারণ ভোটাররাও।

এদিন দুপুর ১২টার দিকে নগরীর শিববাড়ী মোড় এলাকায় কথা হয় সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. রুস্তমের সঙ্গে। তার ভাষ্য, ভোটের দিনের পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তিনি ভোট দিতে বের হবেন। যদি কোনো ঝামেলা দেখেন, তাহলে আর কেন্দ্রমুখী হবেন না তিনি।

নির্বাচন কমিশনের আশ্বাস

শিল্প এলাকা গাজীপুরে নানা ধরনের মানুষের বসবাসের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার কথা মাথায় রেখে আগেই প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্র 'গুরুত্বপূর্ণ' ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন।

ভোটের আগের দিন বুধবার গাজীপুর গিয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, 'গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের আলাদা কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। ছোট-বড় সব ইলেকশনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যেখানেই নির্বাচন হচ্ছে আমরা তা মনিটরিং করছি।

'বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি নির্বাচনও মনিটরিং করা হবে। অলরেডি কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়ে গেছে। মনিটরিংয়ে আমরা যদি কোনো অনিয়ম পাই, তাহলে সেটা আমরা অবশ্যই আমলে নেব। এটার ব্যাপারে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব করব না।'

এর আগের দিন মঙ্গলবার ঢাকায় নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, '৫৭টি ওয়ার্ডে নির্বাহী হাকিম থাকবেন ৭৬ জন, সঙ্গে বিচারিক হাকিমও থাকবেন। র‌্যাবের ৩০টি টিম থাকবে। বিজিবির ১৩টি প্লাটুনের প্রতিটিতে ২০ জনের বেশি সদস্য থাকবেন।'

'এ ছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশের ১৯টি ও মোবাইল টিম হিসেবে ৫৭টি টিম থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য থাকবেন।'

ইসির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে, তারা যে দলের বা যেই হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।'

ভোটের মাঠে ৩৩৩ প্রার্থী

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে এবার ৮ মেয়র প্রার্থীসহ সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট ৩৩৩ জন সরাসরি ভোটযুদ্ধে আছেন।

এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ ছাড়া ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়সাল আহমেদ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তাকে নিয়ে এবার নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩৩৪ জন।

মেয়র পদে প্রার্থী যারা

নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো. আজমত উল্লা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ এরশাদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম।

এর বাইরে স্বতন্ত্র মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন, ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ এবং হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম লড়ছেন।

মেয়র প্রার্থীরা ভোট দেবেন কোথায়

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো. আজমত উল্লা খান টঙ্গীর আরিচপুর এলাকার দারুস সালাম মাদ্রাসা, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন টঙ্গী কলেজ রোড এলাকার নিউ ব্লুন হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দেবেন।

হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান টঙ্গীর এরশাদ নগরের চাংকির টেক এলাকার হাজী আলমাছ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ এরশাদ নগরের চাংকির টেক এলাকার হাজী আলমাছ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম নলজানির বাড়িআলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন বলে তারা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুন নগরীর কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম রনি টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হাসপাতাল, ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ উত্তর খাইলকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজেদের ভোট দেবেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Postgrad doctors block Shahbagh demanding stipend hike

The blockade resulted in halt of traffic movement, causing huge suffering to commuters

1h ago