ভোটের গোপন কক্ষে ইভিএমে বোতাম চেপে দেওয়ার লোকের আনাগোনা

চাম্বল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারের সঙ্গে গোপন কক্ষে বহিরাগত এক ব্যক্তি। ছবি: সংগৃহীত

'ইভিএম না থাকলে রাতেই ভোট নিয়ে নিতাম আমি। আপনারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোট দেবেন। যদি আপনি ইভিএম এ চাপ দিতে না পারেন, তবে আমি চাপ দেওয়ার মানুষ সেখানে রাখব।'

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী গত ২৮ মে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রকাশ্যে এই বক্তব্য দিয়েছিলেন। আজ বুধবার নির্বাচনের দিনে ঠিক সেই চিত্রই দেখা গেল। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে গোপন ভোট কক্ষে বহিরাগতদের যাওয়া আসা করতে দেখা গেল।

নৌকার প্রার্থীর ওই বক্তব্যের পর সমালোচনার মুখে নির্বাচন স্থগিত করেছিল নির্বাচন কমিশন। আজ বুধবার এখানে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কালো পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি এক নারীর সঙ্গে কালো পর্দা ঘেরা গোপন ভোট কক্ষে ঢুকছেন। ওই নারী দাঁড়িয়ে থাকলেও বোতাম চেপে লোকটিকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। ভাইরাল হওয়া আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইভিএমের গোপন কক্ষে এক নারী ভোটারের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এক পুরুষ।

জানা গেছে ভাইরাল ভিডিওটি ৭নং ওয়ার্ড চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের। ভাইরাল হওয়া ছবিটি ২নং ওয়ার্ড পশ্চিম চাম্বল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুল হক অভিযোগ করেন, যারা অবৈধভাবে ইভিএম বুথের গোপন কক্ষে প্রবেশ করেছে, তারা আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুজিবুল হকের লোক।

তিনি বলেন, 'মুখে দাড়িসহ শার্ট ও ট্রাউজার পরিহিত ব্যক্তিটি চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং মুজিবুলের কর্মী।'

চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটের গোপন কক্ষে ভোটারের সঙ্গে এক বহিরাগত। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুল তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, 'যারা ভোটের গোপন কক্ষে প্রবেশ করেছিল তাদের চিনি না। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বিভিন্ন উপায়ে ভোট বন্ধ করার চেষ্টা করছিল। আমি মনে করি, নির্বাচনে আমার বিজয় বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে।'

এ কথা বলার পর তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে কথা হবে জানিয়ে ফোন বিচ্ছিন্ন করে দেন।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটি তার নজরে এসেছে।

'আমি তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং অফিসারকে (আরও) এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি এবং তিনি উত্তর দেন যে লোকটি পশ্চিম চাম্বল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পোলিং অফিসার ছিলেন। তিনি আমাকে বলেন, যে মহিলা ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি ইভিএমে ভোট দিতে ভয় পাচ্ছিলেন এবং পোলিং অফিসারকে তাকে ভোট দিতে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেন। তাই তিনি গোপন কক্ষে প্রবেশ করেন।'

ভাইরাল হওয়া ভিডিও সম্পর্কে জাহাঙ্গীর বলেন, তিনি এটা লক্ষ্য করেননি।

তিনি বলেন, 'আমি বিষয়টি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছি এবং তার কাছ থেকে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছি।'

জাহাঙ্গীর বলেন, 'আমরা সাধারণত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে নিরুৎসাহিত করি, তবে ভোটারের অনুরোধের ভিত্তিতে কেউ যদি সরল বিশ্বাসে কক্ষে প্রবেশ করে, তবে তা স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং বিতর্কের বাইরে থাকা উচিত।'

এর আগে ২৮ মে, একটি নির্বাচনী প্রচারণায় চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল বলেছিলেন যে ভোটাররা যদি ইভিএমে ভোট দিতে না পারেন, তবে তিনি তার লোকদের ইভিএম বোতাম টিপতে ভোট কেন্দ্রে রাখবেন। ইভিএম থাকলে নির্বাচনের আগের রাতেই তিনি সব ভোট নিয়ে নিতেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মুবিজুল হক বলছিলেন, '… ইভিএম না হলে সব আমি মেরে দিতাম। কাউকে খুঁজতাম না। কথা বুঝেন নাই। ইভিএমে আইডি কার্ড না ঢুকালে হয় না। ওটা হলে ভোট আমি রাতেই নিয়ে নিতাম। তাই আপনাদের কষ্ট করে সেটা নিয়ে যেতে হবে। মেশিনে ফিঙ্গার দিতে হবে। আমি তো প্লেয়ার ওইটা, একেবারে ২০ হাজার নিয়ে ফেলি। সরকার ইভিএম একটা করছে, কী করব...। কষ্ট করে নিয়ে গিয়ে আঙ্গুলে ছাপ দিয়ে ভোট দিতে হবে। ছাপ দিতে না পারলে সেখানে আমি ছাপ দেওয়ার মানুষ রাখব।'

যোগাযোগ করা হলে মুজিবুল তখন ভিডিওটি ভুয়া বলে দাবি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'আমি শিশু নই। আমি বর্তমান চেয়ারম্যান। আমি কি জনসভায় এমন শিশুসুলভ বক্তব্য দিতে পারি?'

Comments

The Daily Star  | English

Early US intel assessment suggests strikes on Iran did not destroy nuclear sites: CNN

Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu said Israel had agreed to Trump's ceasefire proposal

2d ago