রেকর্ড ৭৩ শতাংশ প্রার্থীর জামানত হারানোর নির্বাচন

১৯৯১ সালে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর মধ্যে প্রার্থীদের জামানত হারানোর হার এবারই সর্বোচ্চ।
ইসি
প্রতীকী ছবি

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া এক হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থীর মধ্যে এক হাজার ৪৪১ জন অর্থাৎ ৭৩ শতাংশ প্রার্থী ন্যূনতম ভোট না পাওয়ায় জামানত হারিয়েছেন।

১৯৯১ সালে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর মধ্যে প্রার্থীদের জামানত হারানোর হার এবারই সর্বোচ্চ।

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ২৮টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ১৯টি দলের সব প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

১০৪টি আসনে বিজয়ী প্রার্থী ছাড়া অন্য সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এ আসনগুলোর অধিকাংশেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করেছে।

নির্বাচন আইন অনুযায়ী, নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীদের ২০ হাজার টাকা নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়। অর্থ ফেরত পেতে, প্রার্থীদের নিজ আসনে ভোটারদের দেওয়া ভোটের অন্তত আট ভাগের এক ভাগ বা সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট পেতে হবে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত সংখ্যক প্রার্থীর জামানত হারানো খুবই অস্বাভাবিক এবং এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না এবং সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক ছিল না।

তারা আরও বলছেন, অনেক দলের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী শুধু অংশ নিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী দল ও প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েকটি দল ছাড়া, বেশিরভাগ দলের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সক্ষমতা নেই। তাদের কোনো জনসমর্থন নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ দল যথেষ্ট স্বল্প পরিচিত এবং নতুন গঠন হয়েছে। তারা সংখ্যা বাড়াতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এই নির্বাচন সংখ্যার দিক থেকে অংশগ্রহণমূলক ছিল। কিন্তু সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক হয়নি।'

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'যখন ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ করতে পারে এমন কোনো দল থাকে না, তখন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে পারে না।'

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'এত বেশি সংখ্যক প্রার্থীর জামানত হারানো খুবই অস্বাভাবিক।'

তিনি বলেন, 'এতে প্রমাণ হয় যে নির্বাচনটি একদম প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ছিল।'

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে ২৮টি দলের এক হাজার ৫৩২ জন এবং স্বতন্ত্র হিসেবে ৪৩৭ জন প্রার্থী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি দলগুলোর মধ্যে ছিল তাদের শরিক দল, স্বল্প পরিচিত কিছু ছোট দল এবং 'কিংস পার্টি' নামে পরিচিত নতুন দল।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি ও তাদের মিত্রসহ ১৬টি রাজনৈতিক দল এবং কিছু বামপন্থী দল নির্বাচন বর্জন করেছে। তাদের বক্তব্য, বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, জামানত হারানো এক হাজার ৪৪১ জন প্রার্থীর মধ্যে দলীয় মনোনীত এক হাজার ২২৫ জন এবং স্বতন্ত্র ২১৬ জন।

আওয়ামী লীগের ২৬৫ প্রার্থী, জাতীয় পার্টির ২৮ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তিন প্রার্থী জামানত ফেরত পেয়েছেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুজন করে জামানত ফেরত পেয়েছেন এবং বাংলাদেশ কংগ্রেস, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং কল্যাণ পার্টির একজন করে জামানত ফেরত পেয়েছেন।

কমপক্ষে ৯৪২ প্রার্থী এক হাজারের কম ভোট পেয়েছেন এবং তাদের মধ্যে অন্তত ৪৮ প্রার্থী ১০০টির কম ভোট পেয়েছেন।

ইসির তথ্যে আরও দেখা যায়, দুইবারের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মাত্র ২৮ প্রার্থী জামানত ফেরত পেয়েছেন। দলটি এবারের নির্বাচনে ১১টি আসন পেয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ দলটির সমর্থনে ২৬ আসন থেকে দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নেয়।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'এটি এই অনন্য নির্বাচনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এবার প্রমাণ হয়েছে যে জাতীয় পার্টি তাদের ভোট হারাচ্ছে। আওয়ামী লীগ তাদের জন্য আসন ছেড়ে দিলেও তারা জিততে পারছে না।'

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না থাকলে নির্বাচনকে একতরফা বলা হয়। এবারের নির্বাচনে এটি স্পষ্ট হয়েছে।'

২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি ইসি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় এবং ১৪৭ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। ওই নির্বাচনে মোট ৩৯০ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৬৩ জন জামানত হারান।

২০০৮ সালের নির্বাচনে এক হাজার ৫৫৭ প্রার্থীর মধ্যে ৯৪১ জন জামানত হারান।

২০০১ সালের নির্বাচনে এক হাজার ৯৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারান এক হাজার ২৫৯ জন।

১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে অংশ নেন দুই হাজার ৫৭৪ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে জামানত হারান এক হাজার ৭৬০ জন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে দুই হাজার ৭৮৭ জন প্রার্থীর মধ্যে এক হাজার ৯৩৪ জন জামানত হারান।

Comments

The Daily Star  | English

Iranian President Raisi feared dead as helicopter wreckage found

Iran's state television said Monday there was "no sign" of life among passengers of the helicopter which was carrying President Ebrahim Raisi and other officials

1h ago