প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় পংকজ ও শাম্মীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ৩৫

নিহত মো. সিরাজ সিকদার (৫৫) হিজলা উপজেলার কোড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। উভয় পক্ষই সিরাজকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে।
শেখ হাসিনার বরিশাল জনসভা
বিকেলে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ শুরুর আগে এ সংঘর্ষ হয়। ছবি: টিটু দাস/স্টার

বরিশালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী জনসভার আগে বরিশাল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথের সমর্থক ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন।

আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সভাস্থলে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাকিল বেপারী ও ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ খানের নেতৃত্বে এই সংঘর্ষ হয়। 

নিহত মো. সিরাজ সিকদার (৫৫) হিজলা উপজেলার কোড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। উভয় পক্ষই সিরাজকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে।

পংকজ নাথ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আওয়ামী লীগ মনোনীত শাম্মী আহম্মেদের লোকদের হামলায় আমার ৩৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সিরাজ মারা গেছে। তাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মারা যান।'

আহতরা হলেন, সোহান, শিপন, সিয়াম, সিজান, সিপন, ইয়াসিন, কামরুল ইসলাম, সেকেন্দার গাজী, আলাউদ্দিন, আলামিন, কালাম, নয়ন, মাইদুল, মনির, আলী হোসেন, হান্নান, ধনু বেপারী, হানিফ, মেহেদী খান, রুহুল আমিন ও আলী হোসেন। 

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার কালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিরাজকে হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় আনা হয়। ভর্তি হওয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে।'

তবে হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'নিহতের শরীরের বাইরের অংশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর কারণ বলা যাবে না।'

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পংকজ নাথের কর্মী খোরশেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ২৩টি লঞ্চে মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় এসেছিলাম। আমাদের মিছিল যখন জনসভায় প্রবেশ করে, তখন আমাদের ওপর শাম্মী আহম্মেদের কর্মীরা হামলা চালায়। তাদের ফেস্টুনের কাঠ দিয়ে আমাদের পেটায়। এতে আমাদের অন্তত  ৩০-৪০ জন আহত হয়।'

এদিকে নিহত সিরাজকে নিজেদের কর্মী দাবি করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের নির্বাচনী সমন্বয়ক সৈয়দ মনির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পংকজ নাথের অনুসারীরা জনসভায় বিশৃঙ্খলা করে। এসময় তারা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। সেসময় সিরাজ পড়ে যান। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।'

মনির আরও বলেন, 'বিশৃঙ্খলার সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে কয়েকজন আহত হয়েছে।'

সিরাজকে হাসপাতালে নিয়ে যান হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. হান্নান।

তিনি বলেন, 'আমি হিজলা উপজেলা সভাপতি টিপু সুলতানের সঙ্গে একই লঞ্চে এসেছিলাম। আমাদের সঙ্গে সিরাজ সিকদারও ছিল। আমি মাঠে ঢুকিনি। মাঠে শাম্মী আহম্মেদের কর্মীরা আগেই গিয়েছিল। পরে পংকজ নাথের মিছিল আসে। এমন সময় মারামারি শুরু হলে সিরাজ সিকদার মাঠ থেকে আমার কাছে এসে বলল, তার খুব ঘাম হচ্ছে শরীর খারাপ লাগছে। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সে পড়ে যায়। তাকে আমিসহ কয়েকজন ধরাধরি করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে উপস্থিত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'

'সিরাজের বাড়ি আমার বাড়ির সঙ্গেই। তিনি ৬ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি। আমি যতদূর জানি তিনি শাম্মী আহম্মেদের কর্মী', বলেন হান্নান।

এ বিষয়ে পংকজ নাথ বলেন, 'স্থানীয়দের কাছে জিজ্ঞেস করলেই জানবেন সে আমার লোক। তবে সে কীভাবে মারা গেছে সেটি আমি বলছি না। তবে সে আমাদের লোক।'

পুলিশ কমিশনার মো. জিহাদুল কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জনসভার মধ্যে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। একসময় সিরাজ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। তিনি হামলা বা আঘাতে মারা গেছেন বলে চিকিৎসকরা জানাননি। তবুও তদন্ত অব্যাহত রেখেছি।' 

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী ও জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের প্রার্থিতা বাতিলে ইসির আদেশ এখনো বহাল আছে। যদিও প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইতোমধ্যে শাম্মী আপিল বিভাগে ৩টি পৃথক আবেদন করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Political parties want road map to polls

Leaders of major political parties yesterday asked Chief Adviser Prof Muhammad Yunus for a road map to reforms and the next general election.

4h ago