নীলফামারী-৪: যেখানে নির্বাচনী প্রচারণা চলছে উর্দুতেও

উর্দুতে নির্বাচনী প্রচারণা
প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বা রিকশা ভাড়া নিয়ে মাইকিং করছেন প্রার্থীরা। ছবি: স্টার

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশের মতোই নীলফামারী-৪ আসনের প্রার্থীরাও প্রচারণায় ব্যস্ত। কিন্তু, এখানে রয়েছে কিছুটা ভিন্নতাও। এই আসনে প্রার্থীরা তাদের প্রচারণায় বাংলা ভাষার পাশাপাশি ব্যবহার করছেন উর্দু ভাষাও।

বাংলার পাশাপাশি উর্দুতে প্রচারণা চালানোর কারণে কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন অনেকেই।

নীলফামারী-৪ সংসদীয় আসনটি জেলার সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিয়ে গঠিত।

প্রার্থীরা তাদের প্রচারণায় মাইকিং করছেন, সেখানে বলা হচ্ছে 'মেরে ভাইয়ো আউর বাহিনো, সাত জানুয়ারি কা চুনাও মে আপকা কিমতি ভোট আপকা পেয়ারা …. ভাইকো …. মার্কামে দে কার কামিয়াব বানাইয়ে'।

বাংলায় এর অর্থ 'প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আসন্ন সাত জানুয়ারির নির্বাচনে আপনাদের মূল্যবান ভোট আপনাদের প্রিয় …. ভাইকে …. মার্কায় দিয়ে জয়যুক্ত করুন'।

নির্বাচন কমিশন প্রচারণার জন্য প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে কর্মী-সমর্থকদের দিয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বা রিকশা ভাড়া নিয়ে মাইকিং করছেন।

ব্যাপকভাবে চলছে পোস্টার লাগানো ও লিফলেট বিতরণের কাজও।

মাইকিং করার সময় এভাবেও বলা হচ্ছে 'জানে মানে হাস্তি, গারিবোকা দোস্ত …. ভাইকো …. মার্কামে আপকা কিমতি ভোট ছাপ্পা মারকে কামিয়াব কিজিয়ে'।

বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, 'সুপরিচিত, গরিবের বন্ধু …. ভাইকে …. মার্কায় সিল মেরে মূল্যবান ভোট প্রদান করে বিজয়ী করুন'।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নীলফামারী-৪ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৩৪ জন।

এর মধ্যে অবাঙালি অধ্যুষিত সৈয়দপুর উপজেলায় ভোটার রয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জন।

এখানে বেশিরভাগ ভোটারই উর্দুভাষী, যাদের স্থানীয়ভাবে বিহারী বলা হয়।

বিহারীরা ব্রিটিশ আমলে ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত অবিভক্ত ভারতবর্ষের অন্যতম বৃহৎ সৈয়দপুর রেল কারখানাকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় আসেন।

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্তির পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মুখে আরও অনেক অবাঙালি দেশান্তরী হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত সৈয়দপুরে চলে আসে। আগে থেকেই তাদের অনেকের আত্মীয় এখানে থাকায় তারাও সৈয়দপুরকেই তাদের নতুন আবাস হিসেবে বেছে নেন।

এই ভোটারদের প্রতি লক্ষ্য রেখেই উর্দুতে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা।

এ বিষয়ে প্রার্থীরা জানান, বিহারীদের মধ্যে যারা প্রবীণ তারা বাংলা বোঝেন না। এমন ভোটারের সংখ্যাও অনেক। তাদের জন্যই উর্দুতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যেন তারা খুশি হন।

বিহারী নেতা মজিদ ইকবাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের নতুন প্রজন্ম আধুনিক শিক্ষা লাভ করায় বাংলায় লিখতে, পড়তে ও বলতে পারে। কিন্তু, প্রবীণরা তা পারেন না। কাজেই তাদের জন্য উর্দুতে নির্বাচনী প্রচারণা করা বাস্তবসম্মত।'

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মাইকিং করছেন আব্দুল খালেক। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভিন্ন ভাষায় মাইকিং শুনে বাঙালিরা বিষয়টিকে কীভাবে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, 'উর্দুতে প্রচারণা শুনে বাঙালিরাও কৌতূহলী হয়ে উঠছেন এবং তারা উপভোগ করছেন।'

সৈয়দপুরের মেরীগোল্ড টিউটোরিয়ালের প্রিন্সিপাল ও সমাজকর্মী রুখসানা জামান সানু বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় উর্দুভাষীরা প্রকাশ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে। তাদের অনেকেই বাঙালিদের হত্যা ও ধর্ষণ, তাদের বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেন।'

তিনি বলেন, 'সময়ের পরিক্রমায় তারা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক ও ভোটার হন। বিহারীরা সংঘবদ্ধ থাকায় বিভিন্ন নির্বাচনে তাদেরকে জয়-পরাজয়ের নিয়ামক হিসেবে ধরা হয়।'

'ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট দেওয়ায় কারণে কয়েক বছর আগে বিহারী জনগোষ্ঠীর একজন সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়রও হয়েছিলেন। এখনও বেশ কয়েকজন বিহারী কাউন্সিলার আছেন,' যোগ করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইসমাইলের ভাষ্য, 'নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে কোনো ভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

No scope to avoid fundamental reforms: Yunus

Conveys optimism commission will be able to formulate July charter within expected timeframe

5h ago