মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে শেখ মুজিব-হাসিনার ছবি, যুবদল নেতাকর্মীদের ভাঙচুর

ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাঙচুর চালিয়েছেন যুবদল নেতাকর্মীরা।

অভিযোগ উঠেছে আজ বুধবার দুপুরে বন্দর থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন কবিরের নেতৃত্বে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেছেন।

বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার কাজী নাছিরউদ্দিন বলেন, 'যুবদলের নেতাকর্মীরা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকে উচ্চবাচ্য করতে থাকেন। দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর এবং কিছু ঐতিহাসিক ছবি ছিল, সেগুলো নামিয়ে ভাঙচুর করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি, বই বাইরে ফেলে দেন। ভেতরে কিছু প্ল্যাস্টিকের চেয়ার ভাঙচুর করেন তারা।'

এর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে আয়োজিত আসন্ন বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এক দফা ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সেই সময় কমপ্লেক্সের এলইডি টেলিভিশন লুট হয়েছিল।

সভায় মুক্তিযোদ্ধারা সেই বিষয় উপস্থাপন করেছেন বলে জানান নাছিরউদ্দিন।

সভা শেষে নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ও বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন পরিদর্শন করেন।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ইউএনও ও ওসি উপস্থিত থাকতেই যুবদল নেতাকর্মীরা কমপ্লেক্সের সামনে জড়ো হন এবং তারা বের হয়ে যাওয়ার পরপরই ভাঙচুর চালান।

এই প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক বাসিন্দা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, 'ইউএনও ও ওসির উপস্থিতিতেই নেতাকর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন। তারা বের হয়ে গেলে ভেতরে ভাঙচুর চালান। কমপ্লেক্সের ভেতরে নির্মিত শেখ মুজিবুর রহমানের কংক্রিটের প্রতিকৃতি বড় হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলেন।'

ভাঙচুর ও মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে উচ্চবাচ্যের সময় স্থানীয় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। তাদের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে যুবদল নেতা হুমায়ূন কবির তার অনুসারীদের উপস্থিতি দেখা যায়।

হুমায়ূন কবির সাংবাদিকদের বলেন, দুপুরে ইউএনও এবং ওসিকে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে প্রবেশ করতে দেখি। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদে প্রবেশে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। তখন আমরা ভেবেছি এখানে কোনো গোপন সভা হচ্ছে।'

'পরে ভেতরে ঢুকে দেখি মুক্তিযোদ্ধা সংসদে এখনো ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানো রয়েছে। যাদের হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত, তাদের ছবি এখনো কেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদে টানানো থাকবে? আমরা ছবিগুলো নামিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছি। এর বেশি কিছু হয়নি,' যোগ করেন তিনি।

নাছিরউদ্দিন বলেন, 'শেখ হাসিনার ছবি আগেই নামিয়ে আমরা গোডাউনে রেখেছিলাম। তারা সেখান থেকে বের করে ভাঙচুর করেছে। বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানোর কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাই নামানো হয়নি।'

জানতে চাইলে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'কমপ্লেক্সের ভেতরে ভাঙচুর করা হয়েছে, ব্যাপারটি এমন না। আসলে ভাঙচুর করার মতো তেমন কিছুই নেই। কেননা ৫ আগস্ট সেখানে একবার হামলা হয়েছিল। সেখানে কিছু ছবি ছিল, আজ ওই ছবিগুলো বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আর প্রতিকৃতিটিও আগে ভাঙা হয়েছিল। আজ তার ওপরেই কয়েকটা বাড়ি দিয়েছে বলে শুনেছি।'

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, 'কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ছবিগুলো ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। এই বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। কমপ্লেক্সের চাবিটি পুলিশের কাছে রয়েছে। পরে দায়িত্বরতদের কাছে দেওয়া হবে।'

Comments