ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে ৫০ আওয়ামী লীগ নেতা মাদকের ‘গডফাদার’
২৫ অক্টোবর দিনগত রাতের ঘটনা। তখন রাত অনুমান দেড়টা বাজে। বিজয়নগরের সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী নলগড়িয়া গ্রামের পাকা রাস্তার পাশ থেকে ১২০ বোতল এসকফ সিরাপসহ কাশিনগর গ্রামের মিস্টু মিয়া নামের এক যুবককে আটক করে ওই বিটের পুলিশ কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই আলম সোহাগ ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। মাদকদ্রব্য বহনকারী মিস্টু মিয়ার মাধ্যমে মোবাইলে কল করে বিষয়টি জানানো হয় মাদকের মালিক কাশিনগর গ্রামের বাসিন্দা জসীমকে। এরপর নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় জসীমের সঙ্গে রফা হয় পুলিশের। মাত্র ২৫ বোতল জব্দ দেখিয়ে এবং মাদকের মালিকের নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি মামলা দায়ের করে শুধুমাত্র বহনকারীকে আসামি করে আদালতে পাঠানো হয়।
এ ঘটনার আরও দুই সপ্তাহ আগে ১২ অক্টোবর রাতে বিজয়নগর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিলুফা ইয়াসমিনের ইসলামপুর গ্রামের বাড়ি থেকে ৭৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৭৮টি ভুয়া এনআইডি কার্ড, ৫০০০ ইন্দোনেশিয়ান রুপি, ১১৪০ ভারতীয় রুপি, মাদক বিক্রির নগদ ১৭ হাজার ৪৩০ টাকা এবং দুটি পাসপোর্ট জব্দ করে যৌথবাহিনী। এসময় নিলুফা ও তার স্বামী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মিনার মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
শুধু আওয়ামী লীগ নেত্রী নিলুফা ইয়াসমিনই নন, বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০ জনেরও বেশি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী মাদকের 'গডফাদার' হিসেবে কাজ করছেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতন ও শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতাও মাদক চক্রে যুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের ব্যাপারে স্থানীয়রা দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভারতের সঙ্গে ৩৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে বিজয়নগর উপজেলার। দীর্ঘ সীমান্ত থাকার সুবাদে এখানকার বাসিন্দাদের একটি অংশ মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। আর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে চোরাকারবারের নেপথ্যে জড়িয়েছেন সেখানকার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। স্থানীয়ভাবে বেচাকেনার পাশাপাশি এখান থেকে রাজধানীতেও মাদক সরবরাহ করা হয়। এতে মদদ দেন বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী। এসব মাদকদ্রব্যের সিংহভাগই গাঁজা ও ইয়াবা। এছাড়া আছে ফেনসিডিল, এসকফ সিরাপ এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ ও বিয়ার।
তবে বিজয়নগরে মাদক পাচারে সরাসরি জড়িতদের সংখ্যা ছয় শতাধিক বলে জানিয়েছে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। খুচরা পর্যায়ে শতাধিক স্পটে প্রতিদিন কেনাবেচা হয় মাদকদ্রব্য।
পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বিজিবির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এই উপজেলার অন্তত ছয় শতাধিক মাদক কারবারি এবং শতাধিক মাদক স্পট কোন না কোনভাবে এসব নেতারা নিয়ন্ত্রণ করছেন। সরকার পরিবর্তনের পরেও ওই এলাকার কালো ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এখনো তাদের কব্জাতেই রয়েছে।
কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজশের কারণে আওয়ামী লীগের গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। অসাধু পুলিশ কর্মকর্তারা থানার ওসির নাম ভাঙ্গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তারা ছোট-বড় মাদক কারবারিদের 'ব্যবসা নির্বিঘ্ন' করতে ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত মাসোহারা নিয়ে থাকেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন কয়েকজন৷
বিজয়নগরের পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী মো. ইয়ার হোসেন তার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ খন্দকারের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বড় ভাই দুলাল খন্দকার ও তার চাচাতো ভাই টিটু খন্দকার মাদকের 'গডফাদার' হিসেবে চিহ্নিত। চলতি বছরের ২৬ মার্চ ১৯০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট চোরাচালানের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে বিজয়নগর থানায় মামলা করেছেন বিজিবির ২৫ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন লক্ষ্মীপুর বিওপির হাবিলদার জাকারিয়া আকন্দ। তারা প্রকাশ্যে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, এসকফ সিরাপসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ভারত থেকে পাচার এমনকি ভারতে মানব পাচারের সঙ্গেও জড়িত।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, মাদক ব্যবসার মাধ্যমে তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তিনি কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ শতক জমি কিনেছেন। শহরের কাউতলি এলাকায় ৭০ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট এবং গ্রামের বাড়িতে আরও ৭০ লাখ টাকায় বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরতলীর সুহিলপুর এলাকায় ভগ্নিপতির নামে কোটি টাকায় একাধিক সম্পত্তি কিনেছেন। এছাড়াও সোনালী এবং ইসলামী ব্যাংকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখায় তাদের নামে কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে।
বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি এবং পাহাড়পুর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল হকের বিরুদ্ধেও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। গত ২৩ অক্টোবর বিজয়নগর থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। একই ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ড শাখা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজ মিয়া মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করে কোটিপতি হয়েছেন। গ্রামে গড়ে তুলেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'সরকার পরিবর্তনের পর এ পর্যন্ত কয়েকটি সাঁড়াশি যৌথ অভিযান চালিয়ে দুইজন গডফাদারকে গ্রেপ্তার এবং পাঁচ গডফাদারের নামে মামলা হয়েছে। গডফাদাররা এখন গা-ঢাকা দিয়েছে।'
তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, গত ৫ আগস্ট থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত তারা মোট ১০৪৫ পিস ইয়াবা, ৫০ কেজি গাঁজা ও ৬ বোতল এসকফ সিরাপ উদ্ধার করেছেন। মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মোট ১৯টি মামলায় ২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিজয়নগর থানা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসে এই থানায় মাদকদ্রব্য উদ্ধার সংক্রান্ত ২৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়ের মধ্যে পুলিশের অভিযানে ১২১ কেজি গাঁজা, ৫৫০ বোতল ফেনসিডিল, ৪৮৯ বোতল এসকফ সিরাপ, ১২ বোতল বিয়ার ও ১৪৩৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ মানিক মিয়া, তার ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নেসহ অন্তত ৩০ জনকে দিয়ে মাদকের কারবার পরিচালনা করছেন। তাদের কেউ ধরা পড়লে মানিক তাদেরকে ছাড়িয়ে নেন। মানিকের ভাগ্নে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়মনও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মাদকের ব্যবসা করছেন।
এছাড়াও এই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সোহেল খান এবং সাধারণ সম্পাদক বকুলের দলীয় প্রভাব ব্যবহার করে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা দেদারসে মাদক ব্যবসা করছেন।
পাশের ইউনিয়ন বিষ্ণুপুরের চেয়ারম্যান (বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন) এবং ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া তার এলাকার একটি মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর স্ত্রী ফাহিমা খাতুনকে 'মা' সম্বোধন করার কারণে এলাকার কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেতো না।
এছাড়া একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ মেম্বার, দুই সহোদর সানি ভূঁইয়া ও রবিন ভূঁইয়া, বিষ্ণুপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ মেম্বার, ইছহাক মেম্বার, হোসেন মেম্বার, বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহীন মিয়া দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
পত্তন ইউনিয়নের বাসিন্দা, যুবলীগ নেতা ইকবাল ওরফে ডন ইকবাল এবং একই এলাকার লিলু মিয়া দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কোটি টাকার মাদক রাজধানীসহ সারা দেশে পাচার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নরসিংদীর শিবপুরসহ রাজধানীতে তাদের একাধিক মাদকের চালান অতীতে ধরা পড়েছে। তাদের আত্মীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ আছে।
পাহাড়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মৃধার নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি সিন্ডিকেট মাদক কারবারের নেপথ্য সহযোগী বলে জানা গেছে।
একই ইউনিয়নের সেজামুড়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ২০২০ সালের ২৩ মে মাদক বিরোধী সভা করায় স্থানীয় আউলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবু নাছিরকে পিটিয়ে হত্যা করে একই গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার ভূঁইয়া ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে গত ২০২১ সালের ২ মার্চ মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউসারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের ছত্রছায়া থাকার কারণে এতদিন কাউসারসহ অন্য আসামিদের কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের স্থানীয় এই সিন্ডেকেট ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে পুরো পাহাড়পুর ইউনিয়নের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। এতে মোটা অংকের টাকা ভাগ পেতেন এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খন্দকারও রয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর সীমান্তবর্তী হরষপুর ইউনিয়নটি মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সারওয়ার রহমান ভূঁইয়ার ছেলে দর্পন ভূঁইয়া সেখানকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী বুধন্তী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম নিজ এলাকায় মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করেন।
বিজয়নগর উপজেলা সদর সংলগ্ন চান্দুরা ইউনিয়নে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাতগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কাওছার মিয়া, জালালপুরের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আসগর, হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা ২৪ মামলার আসামি ফয়সাল আহমেদ।
বিজয়নগর উপজেলা সদরের ইছাপুরা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বৃহত্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, স্থানীয় ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ী মৃণাল চৌধুরী লিটন নেপথ্যে থেকে বহু মাদক কারবারির 'রক্ষাকর্তা' হিসেবে কাজ করেন। মাদক সেবনকারী হিসেবে পরিচিত মৃণাল চৌধুরী লিটন নিজেকে আওয়ামীপন্থী প্রেসক্লাবের সভাপতি পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটাতেন। স্থানীয় সাংবাদিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য থানায় তদ্বির করতেন।
সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রামের কুশাই বাড়ির বাসিন্দা একাধিক মাদক মামলার আসামি জসীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত ২৫ অক্টোবর রাতে এসআই জাহান-ই আলম সোহাগ ও এএসআই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাকে ডেকে নেন। তারা মিস্টু মিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে এবং তাকে মামলার আসামি না করার শর্তে এক লাখ ২০ হাজার টাকা নেন। টাকা পাওয়ার পর তারা ওসি জেনে যাওয়ার দোহাই দিয়ে মিস্টুকে মামলার আসামি করেন এবং ১২০ বোতল এসকফের স্থলে মাত্র ২৫ বোতল জব্দ দেখান। বাকি ৯৫ বোতল এসকফ তারা বিক্রি করে দিয়েছেন।'
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসআই জাহান-ই আলম সোহাগ বলেন, '১২০ বোতল এসকফ উদ্ধার ও এক লাখ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। আমি মিস্টুর কাছ থেকে ২৫ বোতল পেয়েছি এবং তা দিয়েই চালান করেছি। আর জসীম নামের কারো সঙ্গে কোন যোগাযোগ হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, 'এই নামের কোন মাদক ব্যবসায়ীকে আমি চিনি না।'।
এদিকে, একই অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার এএসআই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মোবাইলে কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, 'এ অভিযোগ পেয়ে আমি এই দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আমি সোর্স ব্যবহার করে প্রকৃত ঘটনাটা জানার চেষ্টা করছি।'
আওয়ামী লীগ নেতাদের মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের অনেকে মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন এটা সত্য। এখনো হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তারা কাজ করছেন। তবে এখন কাউকে মাদকসহ ধরলে এটা কার মাল, কার কাছে যাবে – এসব খোঁজ নিয়ে তাকেও আসামি করা হচ্ছে।'
মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ওসির নামে 'মাসোহারা' নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কার কার কাছ থেকে এমন মাসোহারা নেওয়া হচ্ছে সেটাও আমি খোঁজ নিবো।'
Comments