বেক্সিমকো পাচার করেছে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার: সিআইডি

বেক্সিমকো গ্রুপ ১৮টি কোম্পানির মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করে সেই রপ্তানি মূল্য ফেরত না এনে অন্তত ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ডিআইজি-অর্গানাইজড ক্রাইম (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) কুসুম দেওয়ান বলেন, সিআইডির আর্থিক অপরাধ ইউনিট বেক্সিমকোর এই অসঙ্গতিগুলোকে 'বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার' হিসেবে অভিহিত করেছে এবং ইতোমধ্যেই এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

সিআইডির ডেটাবেজ অনুসারে, অ্যাপোলো অ্যাপারেলসের মাধ্যমে প্রায় ২৩ মিলিয়ন ডলার, বেক্সটেক্স গার্মেন্টসের মাধ্যমে ২৪ মিলিয়ন ডলার, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলসের মাধ্যমে ২৫ দশমিক দুই মিলিয়ন ডলার এবং এসেস ফ্যাশনের মাধ্যমে ২৪ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে।

এর সবগুলোই বেক্সিমকো গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, যার ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা।

সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান জানান, গ্রুপটি পণ্য রপ্তানির জন্য ক্রেডিট লেটার খুলে ৮০ শতাংশ মূল্যের বিপরীতে স্থানীয়ভাবে ঋণ নিয়েছে। এরপর আর রপ্তানির অর্থ ফেরত আনেনি এবং ঋণগুলোও পরিশোধ করেনি।

তিনি বলেন, 'বেক্সিমকো গ্রুপ এভাবে অর্থপাচার করেছে।'

সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের আরেক কর্মকর্তা জানান, তারা প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন যে সালমান এফ রহমান পচারের অর্থ দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন।

সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান সৌদি আরবে একটি বড় ওষুধ কোম্পানি খুলেছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তা। সৌদি আরবের ওই কোম্পানির বেশিরভাগ অর্থ বাংলাদেশ থেকে গেছে বলেও জানান তিনি।

কুসুম দেওয়ান বলেন, 'প্রাথমিক তদন্ত শেষ হলে বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে মামলা হবে।'

প্রাথমিক তদন্তে সিআইডির আর্থিক অপরাধ ইউনিট জানতে পেরেছে, বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে সাতটি ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে ঋণ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ঋণের মধ্যে ৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে, যার চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান নিজেই।

তদন্তের সঙ্গে জড়িত এক সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ব্যবসায়ীক গ্রুপটি রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে অন্তত ২১ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ঋণ  নিয়েছে।

সিআইডির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বেক্সিমকো ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৯৫ কোটি টাকা; সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী থেকে ৫ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা এবং এবি ব্যাংক থেকে ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

আর্থিক অপরাধ ইউনিট তাদের ডেটাবেজ সংগ্রহের জন্য সাতটি ব্যাংকে টিম পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির স্পেশাল সুপারেন্টেন্ড মোহাম্মদ বসির উদ্দিন।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির নামে বিদেশে ঋণের অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, গত তিন বছরে মার্কেট থেকে দৃশ্যমানভাবে প্রায় ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

একটি দোকান কর্মচারীকে হত্যার মামলায় গত ১৩ আগস্ট থেকে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন সালমান এফ রহমান।

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt secretly backing wrongdoers?

BNP acting chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of Lal Chand, alias Sohag, due to its silent support for such incidents of mob violence.

1h ago