কোটা বহালে হাইকোর্টের রায়ে ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা আপিল বিভাগের

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে কোটা বহালে হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় এ বিষয়ে দুই শিক্ষার্থীর দায়ের করা পৃথক আপিলের শুনানি করেন আপিল বিভাগ। শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পূর্ণ আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরতে ও পরীক্ষায় অংশ নিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদেরকে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে বলেছেন।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল আবেদনের শুনানির সময় আমরা সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আইনজীবীদের মাধ্যমে যুক্তি শুনব।

তিনি বলেন, 'অনেক হয়েছে, রাস্তা থেকে ক্লাসে যান।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আদালতের এই আদেশের পর চার সপ্তাহের জন্য দেশে কোটা ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, 'সাবজেক্ট ম্যাটারের ওপর স্থিতি অবস্থা দিয়েছে চার সপ্তাহের জন্য। আগামী সাত আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। তখন আদালত রায় দেখে চূড়ান্ত বিবেচনা করবেন।'

তিনি বলেন, 'আদালত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেছেন। উপাচার্যদের উদ্দেশে বলেছেন, তারা যেন শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখেন। ক্লাস করান। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলে শুনানিতে অংশ নিতে পারেন।'

সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট করা হয়েছিল। যার চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ৫ জুন হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।

স্বাধীনতার পর থেকেই কোটা ছিল। বিভিন্ন সময় তা কম-বেশি হয়। ২০১৮ সালে কোটা ৫৬ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা। পরবর্তীতে কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তারপর নাতি-নাতনি যুক্ত করা হয়।

কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি তুলে দেয় সরকার।

ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, নবম গ্রেড এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে (১৪তম থেকে ২০তম গ্রেড) কোটাব্যবস্থা বহাল রাখা হয়।

ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।

ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। রুলে পরিপত্রের পাশাপাশি এর আগে দেওয়া হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের আদেশ প্রতিপালন না করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য অধিকারের প্রতি অবজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করা হয়।

গত ৫ জুন রায় ঘোষণায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ার বাধা দূর হয়। ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলাটিতে পক্ষভুক্ত হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান আবেদন করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Manu Mia, who dug thousands of graves without pay, passes away

He had been digging graves for 50 years and never accepted any payment for his service

1h ago