কাউন্সিলর একরামুল হত্যার ৬ বছর, বিচারের অপেক্ষায় পরিবার

একরামুল হক। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাবের ক্রসফায়ারে টেকনাফ পৌরসভা কাউন্সিলর একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও বিচারের অপেক্ষায় দিন পার করছে তার পরিবার।

একরাম হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এগোচ্ছে যেন শামুকের গতিতে।

এদিকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলায় নানাভাবে হুমকি পাওয়ায় আতঙ্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পরিবারটি।

একরামুলের স্ত্রী আয়েশা বেগম গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলায়, মামলা করতে চাওয়ায় আমাদের পরিবারকে অনেক হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

তিনি বলেন, বিচার চাইলে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী তাকে ফোন করেন। 'দুই মন্ত্রীই আমাকে মিডিয়ার সঙ্গে যেন কথা না বলি সেটা বলেছিলেন এবং আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তারা আমার দাবির বিষয়টি দেখছেন... কিন্তু পরে কিছুই হয়নি।'

'কেউ খোঁজ নেয় না কীভাবে আমি আমার সংসার চালাচ্ছি এবং আমার দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি,' ফোনে বলেন আয়শা।

২০১৮ সালের ২৬ মে রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের নোয়াখালীপাড়ায় মাদকবিরোধী অভিযানে র‍্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন তিন বারের কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগের সদস্য ও টেকনাফ যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল।

ওই বছরের ৩১ মে কক্সবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে আয়েশা এ হত্যাকাণ্ডকে 'ঠান্ডা মাথায় হত্যা' উল্লেখ করে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।

'ক্রসফায়ার' এর সময় তার সেলফোনে রেকর্ডকৃত কথোপকথনের কিছু রক্তহিম করা অডিও ক্লিপ তিনি সাংবাদিকদের দিয়েছিলেন।

একটি রেকর্ডে, বন্দুকের ট্রিগার টানার শব্দ শোনা যায়। তারপর গুলির শব্দ। এরপর একজন মানুষের গোঙানির আওয়াজ।

তখন র‍্যাব দাবি করেছিল, একরামুল মাদক ব্যবসায়ী ও র‍্যাবের মধ্যে 'ক্রসফায়ারে' নিহত হয়েছেন। একরামুলের স্ত্রীর দাবি ও বক্তব্যকে "পুরোপুরি অসত্য" বলে সংস্থাটি।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আরাফাত ইসলাম গত শনিবার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইন অনুযায়ী ঘটনাটি তদন্ত হয়েছে। তবে ওই সময় আমি র‍্যাবে না থাকায় তদন্তে কী পাওয়া গেছে তা জানা নেই।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‍্যাবের একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোথাও গুলি চালানোর ঘটনা ঘটলে সাধারণত ডেপুটেশনে র‌্যাবে নিযুক্ত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার তদন্ত করেন।

এ ঘটনায় র‍্যাব বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কখনো কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বা র‍্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা তাও প্রকাশ করেনি।

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর 'গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের' দায়ে র‍্যাব এবং এর সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদসহ সাত বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তখন এক বিবৃতিতে একরামুলের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে।

২০২২ সালের ২১ জুলাই তথাকথিত ক্রসফায়ার এবং র‍্যাব ছাড়া অন্য কোনো সংস্থাকে মামলা না করার অভিযোগ তদন্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে প্রতিবেদন পাঠাতে বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এ বিষয়ে সিনিয়র সচিবকে ১২ বার চিঠি দিলেও কমিশন এখনও কোনো প্রতিবেদন পায়নি বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
August 5 declared as July Mass Uprising Day

Govt declares August 5 as ‘July Mass Uprising Day’

It also declared August 8 as "New Bangladesh Day" and July 16 as "Shaheed Abu Sayed Day"

1h ago