আসামিকে না পেয়ে স্ত্রীর মাথায় পিস্তল ধরে, ‘শিশুকে আঘাত’ করে ডিবি
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2024/05/13/braahmnnbaarriyyaayy_naariir_kpaale_pistl_tthekaanor_ghttnaa_1.jpg)
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামি ধরতে অভিযান চালানোর সময় আসামির স্ত্রীর মাথায় পিস্তল তাক করার ঘটনায় ডিবি পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন।
তিনি জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার থলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা ও সৌদি আরব প্রবাসী নূরুল আলম নূরুর বিরুদ্ধে প্রায় এক মাস আগে সদর থানায় মামলা হয়। অভিযোগ, নূরুল ইসলাম সৌদি থেকে আরেকজনের স্বর্ণ এনে পুরোটা বুঝিয়ে দেননি।
নূরুল ইসলাম নিজ বাড়িতে রয়েছেন—এমন খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেলে ডিবি পুলিশ সদস্যরা সেখানে অভিযান চালান। এ সময় বাড়িতে উপস্থিত নারীসহ অন্যদের সঙ্গে ডিবি পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে এক নারীর মাথায় পিস্তল তাক করেন ডিবি পুলিশের সদস্য। তবে আসামিকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশ ওই বাড়ি থেকে চলে আসে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ দ্য ডেইলি স্টারের কাছে রয়েছে।
ঘটনার সময় উপস্থিত নূরুল আলমের ছোট ভাই সারোয়ার আলম অভিযোগ করেন, 'সাদা পোশাকে কিছু লোক বাড়িতে ঢুকেই আমার ভাইকে খোঁজ করতে থাকে। ভাই বাড়িতে নাই বলার পরেও তারা মানতে চাননি। এ সময় তারা আমার ভাবী বন্যা বেগমসহ কয়েকজনকে মারধর করেন। আমার নয় বছরের ছেলে নিশাতও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।'
এ ঘটনার বেশকিছু ভিডিও পুলিশ ডিলিট করে দিয়ে যায় বলে জানান তিনি।
সারোয়ার বলেন, 'আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্বর্ণসংক্রান্ত বিষয়ে মামলা হয়েছে। স্বর্ণটি আমার ভাই আনেননি। অন্যের মাধ্যমে আমার ভাইয়ের কাছে দেওয়া হয়েছে, এটা তারাই বলছেন।'
'আমার ভাইকে ধরতে হলে কেন আমাদের বাড়িতে এভাবে হামলা করতে হবে? বিষয়টি আমরা থানা পুলিশকে জানিয়েছি। আদালতে এ নিয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পুলিশ পিস্তল তাক করার পাশাপাশি গুলিও করেছে। গুলির খোসাও আমাদের কাছে আছে। তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে এই গুলির খোসা কার,' যোগ করেন তিনি।
নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যা বলেন, 'মামলার বাদী আব্দুল কুদ্দুসকে প্রবাসে ব্যবসায়িক অংশীদার না করায় আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার দিন আমাদের বাড়িতে সুন্নতে খাৎনার অনুষ্ঠান চলছিল। এমন সময় পাঁচ-ছয়জন সাদা পোশাকে এসে ডিবি পরিচয় তল্লাশি শুরু করে। বিষয়টি দেখে চিৎকার করায় শিশু নিশাতের মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়। প্রতিবাদ করায় তারা আমার কপালে পিস্তল ঠেকায় এবং ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।'
তিনি দাবি করেন, অভিযানের সময় তাদের বাড়িতে লুটপাটও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের এসআই রেজাউল করিম বলেন, 'বাদীপক্ষ বিষয়টি আমাদেরকে জানালে প্রথমে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোফাজ্জল আলী একজন কনস্টেবলকে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আমি যাই। দূর থেকেই ওই বাড়ির লোকজনের চিল্লাপাল্লা শুনছিলাম। আমি যাওয়ার পর তারা খারাপ আচরণ করেন, আসামিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমার হাতে পিস্তল ছিল। তবে কারো দিক তাক করিনি। কাউকে মারধর করা হয়নি। আমাদের টার্গেট যেহেতু আসামি ধরা, সেই লক্ষ্যেই আমরা এগুচ্ছি। যে কারণে তখন আমরা অ্যাকশানে যাইনি।'
তিনি বলেন, 'মামলার তদন্তভার আমাদের হাতে। মূল আসামির বিরুদ্ধে প্রায় ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক। সদর উপজেলা বিশ্বরোড এলাকার বাদী এসে বাড়িতে আসামির অবস্থানের কথা জানালে সেখানে আমরা যাই।'
ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসাইন বলেন, 'আসামি ধরতে গিয়ে ওই বাড়িতে সমস্যা হয়। যেহেতু কোনো পুলিশ আহত হননি, সে কারণে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।'
গুলি করা কিংবা পিস্তল তাক করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, 'তদন্ত করার চিঠি পেয়ে কার্যক্রম শুরু করেছি। আশা করছি যথাসময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।'
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'বিষয়টি তদন্তে ইতিমধ্যেই তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনো অফিসার যদি আসামি ধরতে গিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
Comments