সিসি ক্যামেরায় চেহারা স্পষ্ট, ১১ দিনেও ধরা পড়েনি চোর
রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসের এক ফ্ল্যাট বাসায় গত ১৭ মার্চ চুরির ঘটনা ঘটে। সেদিন ওই ফ্ল্যাট থেকে পাঁচটি মোবাইল ফোনসহ প্রায় ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়, যা সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
এ ঘটনায় সেদিনই পল্লবী থানায় মামলা করেন ফ্ল্যাটের মালিক নাসির উদ্দিনের স্ত্রী মাহমুদা বেগম। তবে ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সেই চুরির ঘটনার কোনো সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ।
ফ্ল্যাট মালিক নাসির উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেদিন বাসায় আমরা ছয়জন ছিলাম। তার কয়েকদিন আগে আমার লন্ডনপ্রবাসী শ্যালিকা তার মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাসায় বেড়াতে আসে। ঘটনার সময় আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। সকাল সোয়া ৮টার দিকে জেগে দেখি আমাদের বাসার মূল দরজা খোলা। দরজার সামনে আমার শ্যালিকার ব্যাগ পড়ে আছে। পরে দেখি যে শ্যালিকাসহ আমাদের কারও ফোন নেই। তখন আমরা বুঝতে পারি যে বাসায় চুরি হয়েছে।'
তিনি জানান, চোরেরা তার ফ্ল্যাট থেকে চারটি আইফোন, একটি স্যামসাং ফোন, একটি অ্যাপল ব্লুটুথ ইয়ারপড ও নগদ টাকাসহ প্রায় ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। তবে বাসার সিসিটিভি ক্যামেরায় চোরদের চেহারা স্পষ্ট ধরা পড়েছে।
নাসির উদ্দিন বলেন, 'ভবনটি ছয়তলার এবং আমরা সবার ওপরের তলায় থাকি। ভবনের তিনতলায় সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। সেই ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় যে, সকাল ৭টা ২১ মিনিটের দিকে একে একে তিনজন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছেন এবং ৭টা ৩১ মিনিটের দিকে নেমে যাচ্ছেন। নামার সময় একজন ব্যক্তিকে মোবাইল ফোনের সঙ্গে সংযুক্ত চার্জার খুলে সিঁড়িতে ফেলে রেখে যেতেও দেখা গেছে।'
'এরপর সেই সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে আমরা পল্লবী থানায় যাই এবং অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করি। পরে থানার এসআই তারেক রাজিব আমাদের বাসায় আসেন এবং বাসার কেয়ারটেকার রমজানকে আটক করে নিয়ে যান। তবে ঘটনার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও চোরদের আটক কিংবা চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ', বলেন তিনি।
কাউকে সন্দেহ করেন কি না, জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, 'এ ঘটনার সঙ্গে বাসার কেয়ারটেকার রমজান জড়িত থাকতে পারেন। কেননা ঘটনার আগের রাতে রমজান আমাদের বাসায় কাজ করার জন্য একজন নারীকে নিয়ে এসেছিলেন। তবে ওই নারী পরদিন সকাল থেকে কাজ শুরু করবেন বলে চলে যান। এ কারণে সন্দেহ করছি যে, এই চুরির ঘটনায় রমজান ও ওই নারীর সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।'
এ বিষয়ে জানতে বুধবার সকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই তারেক রাজিবকে ফোন করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনার দিনই ওই বাসার কেয়ারটেকার রমজানকে আমরা আটক করি। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রমজান বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য দিতে পারেননি।'
'আমরা ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। এখন সেগুলো বিশ্লেষণের কাজ চলছে। সিসিটিভি ফুটেজের সিডিআর প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে আমাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করব', যোগ করেন তিনি।
সিডিআর প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যে মোবাইলগুলো চুরি হয়েছে, আমরা সেগুলোর আইএমইআই নম্বর পেয়েছি। এখন চেষ্টা করছি আইএমইআই নম্বরের মাধ্যমে সেই ফোনগুলোকে ট্র্যাক করার, যে ফোনগুলো কেউ ব্যবহার করছে কি না। করে থাকলে সেগুলো কোন লোকেশনে আছে। এ ছাড়াও, ফোনগুলোর কল রেকর্ড ও মেসেজ আদান-প্রদানের তথ্যও জানার চেষ্টা করছি।'
সিসিটিভি ফুটেজে তিন ব্যক্তির চেহারা স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, তারপরও চোর ধরা পড়ছে না কেন? জানতে চাইলে এসআই তারেক রাজিব বলেন, 'হয়তো তারা গা-ঢাকা দিয়েছে। তবে ওই এলাকায় আমাদের সোর্স আছে। তা ছাড়া আমরা আশপাশের বিভিন্ন দোকানে সিসিটিভি ফুটেজ দিয়ে রেখেছি, যাতে তাদের কেউ চিহ্নিত করতে পারলে আমাদের জানায়। আশা করছি, চোর ধরা পড়বে।'
Comments