রাজশাহীতে ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দল’র জেরে আ. লীগ সমর্থককে হত্যা

নিহত জিয়ারুল হক। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক সমর্থককে হত্যা করেছে আততায়ীরা।

তানোর উপজেলার সার্কেল এএসপি সোহেল রানা জানান, নিহত জিয়ারুল ইসলাম (৪০) উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের বিলশহর গ্রামের মৃত মহির মণ্ডলের ছেলে। আজ বুধবার ভোররাত ২টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে ২০০ গজ দূরে পাকা রাস্তায় তাকে পড়ে থাকতে দেখে এক জেলে পুলিশে খবর দেন।

পুলিশ জিয়ারুলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জিয়ারুলের মাথার পেছনে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, জিয়ারুলের মোটরসাইকেলটি মরদেহের পাশেই পরে ছিল।

এএসপি সোহেল রানা বলেন, 'এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতা ছিল জিয়ারুলের।'

জিয়ারুলের পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন এবং নিয়মিত দলীয় কর্মকাণ্ডে অনুদান দিতেন।

জিয়ারুলের ভাই রবিউল ইসলাম বলেন, 'এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক কোন্দলের জেরে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'লালপুর বাজারে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালে তালন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসানের সঙ্গে আমার ভাইয়ের শত্রুতা শুরু হয়। বিরোধ সংক্রান্ত মামলাও লড়ছিলেন তিনি।'

তিনি দাবি করেন, 'ইউপি সদস্য হাসান বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে। গত নির্বাচনের সময় শত্রুতা আরও বেড়ে যায়। গত নির্বাচনে পর থেকে বেশ কয়েকবার আমার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল এই বাহিনীর সদস্যরা।'

পার্শ্ববর্তী নারায়ণপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী মইফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে জিয়ারুল ইসলাম ও আরও কয়েকজনকে নিয়ে তিনি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে দেখা করতে তানোর উপজেলা সদরে যান।

সংসদ সদস্যের সঙ্গে দেখা করার সময় জিয়ারুল অনুপস্থিত ছিলেন জানিয়ে মইফুল বলেন, 'আমি কল কলে তিনি (জিয়ারুল) জানান, হাসান গ্রুপের লোকজন তাকে হুমকি দেওয়ায় তিনি গুদামে ফিরে গেছেন।'

এরপর ভোররাত ১টার দিকে বিলশহর গ্রামে জিয়ারুলের আলুর গুদামে তার সঙ্গে দেখা করেন মইফুল। এর কিছুক্ষণ পর তারা নিজ নিজ বাড়ির দিকে রওনা দেন।

মইফুল বলেন, 'আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তার বাড়ি পর্যন্ত সঙ্গে যাব কি না। তিনি বললেন, যেতে হবে না। এর কয়েক ঘণ্টা পরই খবর পাই যে তাকে হত্যা করা হয়েছে।'

জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী জানান, নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তার সমর্থকরা এখনো সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।

তিনি বলেন, 'এই হত্যাকাণ্ড আমার সমর্থকদের ওপর চলা সহিংসতার ঘটনা থেকে আলাদা কিছু নয়।'

এ ব্যাপারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আবুল হাসান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'আমি এখানে ঘটনার শিকার। ২০১৯ সালে জিয়ারুলের নেতৃত্বে একটি দল আমার ওপর হামলা চালায় এবং আমার বাম হাত ভেঙে যায়। সেই মামলা এখনো বিচারাধীন।'

তিনি বলেন, 'তার বিরুদ্ধে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। তার হত্যাকারী কারা, সে সম্পর্কেও আমার কোনো ধারণা নেই।'

তার বাহিনী সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল হাসান বলেন, 'আমার কোনো বাহিনী নেই। তবে রাজনৈতিক সমর্থক আছে।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

6h ago