১৬ বছরে অন্তত ১০ বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস: সিআইডি

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস
মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ৭ চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। ছবি: সংগৃহীত

মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ৭ চিকিৎসকসহ চক্রের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

সিআইডি জানায়, ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এই চক্র মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৫ জন বিএনপি ও ১ জন জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে বিভিন্ন সময় যুক্ত ছিলেন।  

রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে রোববার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো মানিলন্ডারিং মামলায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— ফেইম কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত ও প্রধান অভিযুক্ত ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০), জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সোহেলী জামান (৪০),   প্রাইমেট কোচিং সেন্টারের মালিক ডা. মো. আবু রায়হান, থ্রি-ডক্টরস কোচিং সেন্টারের ডা. জেড এম সালেহীন শোভন (৪৮), মেডিকো ভর্তি কোচিং সেন্টারের মালিক ডা. মো. জোবাইদুর রহমান জনি (৩৮), জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল (নিটোর) এর চিকিৎসক ডা. জিল্লুর হাসান রনি (৩৭),  ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২), গ্রেপ্তারকৃত জসীমের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার (৬৮), রওশন আলী হিমু (৪৫),  ই-হক কোচিং সেন্টারের মালিক আক্তারুজ্জামান তুষার (৪৩), ঢাকার ফার্মগেটে ইউনির্ভাসেল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সহায়তা কেন্দ্রের জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী (৪৫), টাঙ্গাইলের মিন্টু মেমোরিয়াল হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস সরকার (৬৩)।

মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের নিয়ে সিআইডির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, দেশের সব স্তরের প্রশ্নফাঁস বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে সিআইডির বিশেষায়িত একাধিক দল সারা বছর মাঠে কাজ করে ইতোমধ্যে এসএসসি, এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবং বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকারী বড় চক্রগুলোকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্ন ফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ। এ ঘটনায় ২০২০ সালের ২০ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় সম্প্রতি চক্রের অন্তত ৮০ সক্রিয় সদস্য প্রায় ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে।

সিআইডি জানায়, গত ৩০ জুলাই ২০২৩ থেকে ৯ আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল জেলায় অভিযান পরিচালনা করে এ চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় সাইবার টিম। গ্রেপ্তারকৃত ১২ জনের মধ্যে ৭ জনই ডাক্তার। তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্নফাঁস করতেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৮ জন তাদের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। যাতে শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম উঠে এসেছে, যারা প্রশ্ন পেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। ইতোমেধ্যে অনেকে পাশ করে ডাক্তারও হয়ে গেছেন। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এই চক্রের ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো মানিলন্ডারিং মামলায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় সিআইডি।

Comments

The Daily Star  | English
US election outcome’s likely impact on the Russia-Ukraine war

US election outcome’s likely impact on the Russia-Ukraine war

The endgame of the Ukraine war remains uncertain with US policy likely to be influenced by the outcome of the US election.

3h ago