বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতার মারধরে এমসি কলেজের শিক্ষার্থী আহত

সিলেট
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

সিলেটের বালুচর এলাকার মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতার মারধরে কলেজের এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষার্থী মুরারিচাঁদ কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী একিউএম সামসুল হুদা ইমরান। তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মারধর করা ছাত্রলীগ নেতা মাহিন তালুকদার সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। তিনি মুরারিচাঁদ কলেজের শিক্ষার্থী নন। তবে নগরীর টিলাগড় কেন্দ্রিক (মুরারিচাঁদ কলেজ যে এলাকায় অবস্থিত) রাজনৈতিক বলয়ের সঙ্গে যুক্ত এবং এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন রাহীর ঘনিষ্ঠ।

কলেজটিতে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই এবং দেলোয়ার হোসেন রাহী সভাপতি পদপ্রত্যাশী।

আহত ইমরান বলেন, 'রাতে ছাত্রাবাসের পঞ্চম ব্লকে আমার কক্ষ থেকে চতুর্থ ব্লকে হট্টগোল শুনতে পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগত কিছু যুবকের কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। বহিরাগত একজন যুবক আবাসিক এক শিক্ষার্থীকে মারধর করতে উদ্যত হলে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।'

'আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রতিবাদ জানাই। এ সময় কলেজের ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন রাহী ও বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা মাহিন তালুকদারসহ ১০-১২ জন আসেন। ঘটনাস্থলে এসেই মাহিন আমার নাকে ও বাম চোখের উপর ঘুষি দিলে তার হাতের ধারালো কিছুতে লেগে আমার চোখের উপর কেটে যায়। মাহিনের সঙ্গে থাকা অন্যান্য কয়েকজনও আমাকে মারধর করেন', যোগ করেন তিনি।

পরে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ইমরানকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখানে ইমরানের চোখের ওপর ৫টি সেলাই করতে হয়েছে। এ ঘটনায় ইমরান মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহিন তালুকদার মুরারিচাঁদ কলেজের শিক্ষার্থী না হয়েও নগরীর টিলাগড় কেন্দ্রিক রাজনীতিতে যুক্ত থাকার সুবাদে কলেজের ছাত্রাবাসে অবৈধভাবে রুম দখল করেন বসবাস করেন।

সব অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে মাহিন তালুকদার বলেন, 'সুনামগঞ্জ ছাত্রলীগে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও টিলাগড়কেন্দ্রিক রাজনীতির সঙ্গে অনেকদিন ধরে যুক্ত থাকায় মুরারিচাঁদ কলেজের বিভিন্ন বিষয়ে জড়িত হয়ে যেতে হয়। এ ঘটনাও সেরকম।'

তিনি বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ইমরানের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় তিনিও ছাত্রাবাসে বহিরাগত। গত রাতে ২ গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সিনিয়র হিসেবে আমার কথা না শোনায় ২ গ্রুপের ২ জনকে ২টি চড় মারি। এরমধ্যে ইমরানের একটু রক্ত বের হয়। তাকে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ডাক্তারের কাছে পাঠালে তিনি ওসমানী মেডিকেল চলে যান। আমার বিরুদ্ধে তার অভিযোগের বিষয়টি আমার জন্য লজ্জাজনক ও দুখঃজনক।'

মুরারিচাঁদ কলেজের শিক্ষার্থী না হয়েও কলেজ ছাত্রাবাসে অবস্থান করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, 'আমি সিলেট শহরে আমার বাসায় থাকি। ছাত্রাবাসে আমার থাকার কোনো রুম নেই। অভিযোগটি মিথ্যা। তবে টিলাগড়কেন্দ্রিক রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় প্রায়ই ছাত্রাবাসে যাওয়া হয়।'

এসব বিষয়ে মুরারিচাঁদ কলেজের অধ্যক্ষ আবুল আনাম মো. রিয়াজ বলেন, 'ছা্ত্রাবাসে ২ পক্ষের কথা কাটাকাটির জেরে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাকে দেখতে আমি হাসপাতালে গিয়েছি। কলেজে বহিরাতগতদের আসা-যাওয়া আছে, কিন্তু প্রবেশপথে থাকা একজন গার্ডের পক্ষে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে ছাত্রাবাসে কোনো বহিরাগত অবস্থান করেন বলে আমার জানা নেই।'

তিনি বলেন, 'ছাত্রাবাসের সুপারিনটেনডেন্ট ছুটিতে। তিনি আসার পর বহিরাগত প্রবেশের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

JnU students, teachers call off protest after assurances

All the activities of the university will resume from tomorrow

3h ago