বাসার ফ্রিজে মিলল ১০ ব্যাগ রক্ত

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আটক আব্দুল জলিল। ছবি: সংগৃহীত

নাম তার আব্দুল জলিল (৫৫)। এলাকার মাদকসেবী ও অভাবগ্রস্ত মানুষদের ফুসলিয়ে নিজের বাসায় ডেকে এনে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই তাদের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংকে তা সরবরাহ করতেন তিনি।

এই কাজে আব্দুল জলিলের কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা কিংবা প্রশিক্ষণ ছিল না। সংগৃহীত রক্ত তিনি সংরক্ষণ করতে বাসার সাধারণ ফ্রিজে।

গত ১ বছর ধরেই এই কাজ করে আসছিলেন জলিল। গতকাল বুধবার রাতে সাভারে তার ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে ১ বছরের কারাদণ্ড দেন ভাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।

অভিযানের সময় ওই বাসার ফ্রিজ থেকে ১০ ব্যাগ রক্ত ও রক্ত সংগ্রহের বিভিন্ন সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়।  

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল হোসেন জানান, আব্দুল জলিল পাবনা জেলার চাটমহর থানার ইন্তাজ আলীর ছেলে। তিনি সাভার থানা রোডের একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে রক্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ করতেন।

ইসমাইল হোসেন বলেন, 'রক্ত সংগ্রহের কাজে প্রাতিষ্ঠানিক সনদের পাশাপাশি ব্লাড ব্যাংক পরিচালনার সনদও লাগে। এর কোনোটিই নেই আব্দুল জলিলের। আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রক্ত সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণের কাজে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা মেইনটেইন করতে হয়। কিন্তু তিনি সংগ্রহ করা রক্ত রাখতেন বাসার সাধারণ ফ্রিজে। এর সবগুলোই ভয়ঙ্কর অপরাধ।'

জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল জলিল এর সবকিছুই স্বীকার করেছেন বলে জানান ইসমাইল হোসেন। এই অপরাধের জন্য তাকে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০,০০০ টাকা জরিমানা এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

গতরাতের ওই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সাভার উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমূল হুদা। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'মানুষের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহের আগে কিছু শারীরিক পরীক্ষা করতে হয়। সেগুলো জলিল করতেন না। ওই রিপোর্টগুলো হাতে লিখে মনমতো তৈরি করতেন তিনি। এছাড়া তার রক্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিক্রির প্রক্রিয়াগুলোও ছিল ভয়ংকর।'

সায়েমূল হুদা আরও বলেন, 'সংগৃহীত রক্ত ঢাকার কয়েকটি ব্লাড ব্যাংকে বিক্রি করতেন জলিল। এমন কয়েকটি ব্লাড ব্যাংকের নামও বলেছেন তিনি। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।'

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সাভার থানায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আব্দুল জলিলের। তার ভাষ্য, সাধারণত নেশাগ্রস্ত ও অভাবগ্রস্ত মানুষদের ৫০০-৭০০ টাকা দিয়ে তিনি তাদের শরীর থেকে রক্ত নিতেন। সেগুলো ঢাকার ব্লাড ব্যাংকগুলোতে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করতেন।

সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, 'জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল জলিল ঢাকার রাজধানী, নিরাপদ, আলিফ ও বাংলাদেশ ব্লাড ব্যাংক নামে ৪টি ব্লাড ব্যাংকের নাম বলেছেন। ওই জায়গাগুলোতে তিনি সংগৃহীত রক্ত বিক্রি করতেন বলে দাবি করেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Iran's top security body to decide on Hormuz closure

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

15h ago