ডিবি পরিচয়ে দিনে দেড়শ মানুষকে ফোন করতেন, অবশেষে গ্রেপ্তার

কামাল প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত ১০০-১৫০টি নাম্বারে ফোন দিতেন। ২-৩ জন তার ফাঁদে পড়ে সন্তানকে বিপদ থেকে বাঁচাতে ১ থেকে ২ লাখ টাকা দিতেন।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা করে ৪ কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।

গতকাল বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম কামাল হোসেন।

সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন জানান, কামাল প্রতিদিন বিভিন্ন জনকে ফোন করতেন। নিজেকে ডিবি পুলিশ দাবি করে তিনি বলতেন, তাদের ছেলেকে হোটেল থেকে আটক করা হয়েছে। ছেলেকে মামলা বা গ্রেপ্তার থেকে বাঁচাতে চাইলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠাতে হবে এবং এ বিষয় নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করা যাবে না।

সহকারী পুলিশ কমিশনার আরও জানান, কামাল প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত এভাবে ১০০-১৫০টি নাম্বারে ফোন দিতেন। ২-৩ জন তার ফাঁদে পড়ে সন্তানকে বিপদ থেকে বাঁচাতে ১ থেকে ২ লাখ টাকা দিতেন। তার এ কাজে সহায়তা করতেন আরও ২ জন।

তার সহযোগী গুলিস্তানের কাপ্তান বাজার, মতিঝিল ও কমলাপুর এলাকায় বিভিন্ন এজেন্টের দোকান থেকে প্রতারণা করে আনা অর্থ উত্তোলন করতেন। প্রতারণার কাজে ব্যবহার করার জন্য প্রতিদিন নতুন সিম ব্যবহার করতেন কামাল। তাকে সিম সরবরাহ করতেন তার অন্য এক সহযোগী।

গোয়েন্দা এই কর্মকর্তা আরও জানান, কামাল ২০১৪ সালে ঢাকায় রেজিস্ট্রেশন ছাড়া একটি সিম কেনেন। প্রথমে নিজেকে ধনী পরিবারের ছেলে পরিচয় দিয়ে নারীদের সঙ্গে কথা বলতেন তিনি।

তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বের হয়ে জানাতেন, পথে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েছেন। এভাবে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন তিনি। ২ বছর এভাবে ৪-৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারণার নতুন পথ অবলম্বন করেন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি কম বয়সী ছেলেদের অভিভাবকদের টার্গেট করে সন্তানকে আটকের কথা বলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে টাকা নেওয়া শুরু করেন।

পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন বলেন, 'কামাল প্রতারণা করে এখন পর্যন্ত ৪ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারণার টাকা বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে ২ কোটি টাকা সুদের কারবারে বিনিয়োগ করেছেন তিনি। বাকি টাকা দিয়ে ৪৩ শতক জমি কিনেছেন। এ ছাড়া একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন।'

এভাবে প্রতারণার শিকার হওয়া এক ব্যক্তি সিটিটিসি সাইবার ক্রাইমের হেল্প ডেস্কের হটলাইনে কল করে এ বিষয়ে সহায়তার আবেদন করেন। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে ছায়া তদন্তে নামে সিটিটিসি সাইবার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন টিম। পরে ওয়ারী থানায় ভুক্তভোগীর করা মামলার ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

'কামালের অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে', যোগ করেন আরিফুল হোসেইন তুহিন।

Comments