আদালতের অনুমতি ছাড়া ২ সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়তে পারবেন না নাকানো

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ ও জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানো। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ ও জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানো। ছবি: সংগৃহীত

জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো তার দুই মেয়ে জেসমিন মালাইকা (১২) ও নাকানো লায়লা লিনাকে (১০) নিয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছেড়ে দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ রায় দিয়েছেন।

জেসমিন মালাইকা এখন মা নাকানো এরিকোর সঙ্গে এবং লায়লা লিনা এখন তার বাবা ইমরান শরীফের সঙ্গে থাকছে।

আদালতের অনুমতি ছাড়া শিশুদের বাংলাদেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার জন্য আপিল বিভাগ নাকানো এরিকোকে সতর্ক করেন।

এই রায়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি ছাড়া ওই ২ শিশুকে বাংলাদেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার আর চেষ্টা যেনো না করেন, সে বিষয়ে নাকানোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

৪টি পৃথক আবেদনের শুনানির ১ পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, উভয় পক্ষই (নাকানো ও ইমরান) বেপরোয়া আচরণ করছেন।

এ বছরের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ ও জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানোর ২ সন্তান তাদের মায়ের হেফাজতে থাকবেন বলে রায় দিয়েছিল ঢাকার একটি পারিবারিক আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে আপিল করেন ইমরান।

আজকের রায়ে আপিল বিভাগ আগামী ৩ মাসের মাঝে উল্লেখিত আপিলের নিষ্পত্তি করার জন্য নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে নাকানো ও ইমরানকে শিশুদের নিজেদের হেফাজতে রাখার বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর অর্থ জেসমিন তার মা নাকানোর সঙ্গে থাকবে এবং লিনা তার বাবা ইমরানের সঙ্গে থাকবে। পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত এ ব্যবস্থা চালু থাকবে।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৭ সদস্যের বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার নাকানো ও ইমরানের ৪টি পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে এসব নির্দেশ দেন।

১টি আবেদনে নাকানো আদালতের অনুমতি ছাড়া শিশুদের বাংলাদেশের বাইরে না নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন।

অপর আবেদনে তিনি ইমরানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে বলেন, শীর্ষ আদালতের আদেশ অমান্য করে ইমরান তার মেয়ে লায়লাকে নিয়ে গেছেন।

ইতোমধ্যে ইমরান নাকানোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করে বলেন, তিনি আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে ২ সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগের চেষ্টা করেছেন।

আদালতে নাকানোর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন, আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এবং ইমরানের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আখতার ইমাম ও রাশনা ইমাম।

২০০৮ সালে জাপানে ইমরানকে বিয়ে করেন নাকানো সেখানে তাদের ৩ সন্তানের জন্ম হয়।

২০২১ সালে নাকানো জাপানের একটি আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করলে ইমরান তাদের ২ মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

নাকানোও বাংলাদেশে এসে শিশুদের হেফাজত চেয়ে শীর্ষ আদালতে আবেদন করেন।

২০২১ সালের ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট ইমরান ও নাকানোকে গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে ২ মেয়েকে নিয়ে ১৫ দিন একসঙ্গে থাকার নির্দেশ দেন।

আদালত সমাজসেবা অধিদপ্তরকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে এই পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেন।

তবে ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট জানায়, পারিবারিক আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২ সন্তান তাদের মায়ের হেফাজতে থাকবে এবং তাদের বাবা তাদের বাড়িতে এসে দেখা করতে পারবেন।

চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, শিশুদের কল্যাণকে সবার আগে বিবেচনা করতে হবে এবং তাদের কল্যাণ ও ভালো থাকার বিষয়গুলোকে বিবেচনা না করে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করা যাবে না।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

7h ago