সন্দেহে গ্রেপ্তার-জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতন বন্ধ: রিভিউ শুনানি পিছিয়ে ১৯ জানুয়ারি

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারাসহ একাধিক ধারায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতন বন্ধের আদেশ বাতিল চেয়ে করা রিভিউ আবেদনের শুনানি ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকের নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন শুনানির প্রস্তুতির জন্য সময় চেয়ে আবেদন করলে সর্বোচ্চ আদালত নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।

আইনজীবী জেডআই খান পান্না এবং অনিক আর হক ব্লাস্টের পক্ষে শুনানি করেন।

প্রসঙ্গত, পুলিশ হেফাজতে ১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী শামীম রেজা রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। সেই আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রায়ে সরকারকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ফৌজদারি কর্যবিধি, ১৮৯৮ এর কিছু ধারা সংশোধন করার নির্দেশ দেন। ওই ধারাগুলোতে পুলিশকে বিতর্কিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্ট ১৫ দফা নির্দেশনা দেন এবং তাতে সন্দেহের ভিত্তিতে নির্বিচারে পুলিশি গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে গ্রেপ্তারকৃতদের নির্যাতন বন্ধের নির্দেশ সরকারকে অবিলম্বে মেনে চলতে বলেন।

তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারও একই পথ অনুসরণ করে। ২০১৬ সালের ২৪ মে আপিল বিভাগ ওই আপিল খারিজ করে দেন এবং হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

ওই বছরের ১০ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। তাতে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিচারকদের জন্য ১৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়, যাতে সন্দেহের ভিত্তিতে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে গ্রেপ্তারকৃতদের নির্যাতন বন্ধ করতে বলা হয়।

এতে আরও বলা হয়, নাগরিকের সংবিধান সুরক্ষিত অধিকার অস্বীকার করার অর্থ দেশের স্বাধীনতাকে অসম্মান করা।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে নির্দেশনার পাশাপাশি আদালত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সিআরপিসির ৫৪ ধারা একটি কুখ্যাত বিধান বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে পুলিশকে নিছক সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি বিধির আরও কয়েকটি ধারায় গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে রাখা ও নির্যাতন নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন।

আদালত পুলিশকে বিচক্ষণভাবে এই ক্ষমতা ব্যবহার করার আদেশ দেন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ব্যবহার হ্রাস করতে বলেন।

এছাড়া, আটক ব্যক্তিদের তাদের পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে বা তারা চাইলে তাদের নিকটতম আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।

'পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী যদি জানা যায় যে, সম্ভাব্য অপরাধ দমনের উদ্দেশ্যে যদি কাউকে আটক করো হয়, সে ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট ওই ব্যক্তিকে বিচার বিভাগীর হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দেবেন না,' বলা হয় পূর্ণাঙ্গ রায়ে।

এত আরও বলা হয়, 'যদি ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গত মনে করেন যে, গ্রেপ্তারের আইনি এখতিয়ার আছে এমন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা তার কোনো কর্মকর্তা আইন লঙ্ঘন করেছেন, সে ক্ষেত্রে তিনি দণ্ডবিধির ২২০ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।'

এই রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০১৭ সালে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh bank reform plan 2025

Inside the 3-year plan to fix banks

Bangladesh has committed to a sweeping overhaul of its troubled financial sector, outlining a detailed three-year roadmap as part of its latest agreement with the International Monetary Fund.

10h ago