বিএনপি নেতা কামাল হত্যা: ১৮ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি, আটক নেই

কামাল
আ ফ ম কামাল। ছবি: সংগৃহীত

সিলেটে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল হত্যার ঘটনার প্রায় ১৮ ঘণ্টা পরও কোনো সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলাও দায়ের হয়নি।

রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেট নগরীর বড়বাজার এলাকায় খুন হন সিলেট জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল। দুটি মোটরসাইকেলে করে হামলাকারীরা তার প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় বড়বাজার ও চৌকিদেখী এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে আজ সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত তারা কাউকে আটক করতে পারেনি।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ মাইনুল জাকির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দাফন শেষে মামলা দায়ের হবে।'

তিনি বলেন, 'আমরা হত্যাকারীদের দ্রুত আটকের চেষ্টা করছি।'

আ ফ ম কামাল হত্যার পর রাতেই সিলেট এমএজি ওসমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা চৌহাট্টা অভিমুখে মিছিল করেন।

মিছিল থেকে বিভিন্ন দোকানপাট ও গাড়ি ভাঙচুর এবং রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। এদিকে, মিছিল থেকে নগরীর রিকাবীবাজার এলাকায় কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভার জন্য রাখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের।

এসব ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে রাত ১২টার দিকে রিকাবীবাজার এলাকায় ছাত্রলীগের সঙ্গে বিএনপি-ছাত্রদলের বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় ভাঙচুরকারীদের আটকের দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন এবং আটক না হলে আগামী ১৯ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ প্রতিহতের ঘোষণা দেন।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের আটকে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। সবাইকে থানায় নিয়ে আসার পর তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।'

এদিকে, দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সিলেট জেলা বিএনপি নেতা আ ফ ম কামালের নিহত হওয়ার নেপথ্যে রাজনৈতিক কারণ নয় বরং ব্যবসায়িক বিরোধ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

গত ১৫ অক্টোবর নগরীর আম্বরখানার মান্নান সুপার মার্কেটে হাতাহাতির একটি ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আ ফ ম কামালসহ বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের ১০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়েছিল।

এর জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে, প্রাথমিকভাবে এমন ধারণা হচ্ছে বলে গতরাতে জানিয়েছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ।

তবে এ ঘটনাকে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমরান আহমেদ চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হত্যাকারীদের আটক না করে পুলিশ গতরাত থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে ও আটক করছে। আমরা আশা করব- হত্যাকারী সন্ত্রাসীরা যাতে রাজনৈতিক প্রশ্রয় না পায় এবং পুলিশ দ্রুত তাদের আটক করে।'

আ ফ ম কামাল হত্যার ঘটনায় সিলেট জেলা বিএনপি কালো ব্যাজ ধারণসহ ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া, আজ বিএনপির পূর্বনির্ধারিত সব কর্মসূচিও আ ফ ম কামালের দাফন ও জানাজার জন্য স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Comments