বিদেশে পাঠানোর কথা বলে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তারা

ছবি: সংগৃহীত

বিদেশে পাঠানোর কথা বলে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া মানবপাচারকারী ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা ও তার প্রধান সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল গতকাল রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা সিরাজগঞ্জের মাহবুব উল হাসান (৫০) ও রাজশাহীর মাহমুদ করিমকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে। সে সময় তাদের কাছে থাকা ৫২১টি পাসপোর্ট, বিদেশে চাকরির জন্য তৈরি ভুয়া কোর্সের সনদ ৬৫টি, ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট ৩০০টি, ভুয়া কোভিড ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট ২২৫টি, সৌদি, ইরাক, কুয়েত, দুবাই, রোমানিয়া, কানাডা ও কম্বোডিয়ায় চাকরির ভুয়া চুক্তিপত্র, ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট, টাকা গ্রহণের রেজিস্টার ৩টি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ১৫টি, রোমানিয়ান জাল ভিসা ৭টি, জাল কাগজপত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত মনিটর, সিপিইউ, কি-বোর্ড, মাউস, স্ক্যানার ও প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামিরা বিভিন্ন দরিদ্র লোকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যারা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক, তাদের কাছ থেকে ২-৩ লাখ টাকা এবং যারা ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে ৬-৭ লাখ টাকা করে নিতেন তারা। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে তাদেরকে বিদেশে পাঠানোর নিশ্চয়তা প্রদান করা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে তারা বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব এবং কোনো কার্যক্রম না দেখে বার বার তাকে টাকা ফেরতের জন্য তাগাদা দিলেও এ পর্যন্ত কাউকে টাকা ফেরত দেননি আসামিরা। গত ২ বছরে পাসপোর্ট এবং অর্থ জমাদানকারী কাউকে বিদেশে পাঠানো হয়নি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহবুব জানান, ২০০০ সাল থেকে তিনি সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য হিসেবে বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতারণার মাধ্যমে কিছু লোক পাঠান। তাদের প্রলোভনে পড়ে ভুক্তভোগী এবং তাদের অভিভাবকরা রাজি হলে প্রথমে তারা পাসপোর্ট ও প্রাথমিক খরচ বাবদ ১ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে থাকেন। উচ্চ বেতনের চাকরির আশ্বাস দিয়ে তারা এভাবে লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করতেন।

লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, বিদেশে পৌঁছানোর পর সেখানে অবস্থানরত এজেন্ট দিয়ে আবার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হতো। তাদেরকে কাজের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বন্দি করে রেখে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হতো। ওই সময় ভুক্তভোগীদের কোনো খাবার দেওয়া হতো না। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ভুক্তভোগীরা নিজেদের চেষ্টায় দেশে ফেরত এসে টাকা ফেরত চাইলে মাহবুব উল্টো অভিভাবক ও ভুক্তভোগীদের দোষারোপ করতেন। এভাবে করোনা মহামারির আগ পর্যন্ত মালয়েশিয়া, দুবাই ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠিয়ে প্রতারণা করে তাদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চক্রটি।

আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

2h ago