সরকারি জমিতে ইটভাটা-পুকুর, সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলি
কক্সবাজারের চকরিয়ায় সরকারি জমি দখল করে পুকুর খননের অভিযোগ পেয়ে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে সন্ত্রাসীরা।
গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের উচিতারবিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আক্রান্ত সাংবাদিক ছোটন কান্তি নাথ দৈনিক কালের কণ্ঠের চকরিয়া প্রতিনিধি।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী উচিতসরবিল এলাকায় বনবিভাগের জমি দখল করে অবৈধভাবে একটি ইটভাটা গড়ে তুলেন। কয়েক মাস আগে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে ইটভাটাটি বন্ধ করে দেয়। ওই ইটভাটার পাশে প্রায় ৮ একর সরকারি জমি রয়েছে। মুজিববর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য ওই জমিটি চূড়ান্ত করে উপজেলা প্রশাসন জমির চারপাশে লাল পতাকার খুঁটি স্থাপন করে। এরপরও স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ওই নেতা সেই সরকারি জমি দখল করে ৬টি পুকুর তৈরি করেছেন। গতকাল বিকেলে ওই পুকুরের ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা ওই নেতার পালিত সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক ছোটনকে লক্ষ্য করে ৩ রাউন্ড গুলি ছুড়েন। সেসময় ছোটন পাশের পাহাড়ে লুকিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেলালউদ্দিন হেলালী ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছোটনকে উদ্ধার করেন।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান হেলালউদ্দিন হেলালী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাংবাদিক ছোটন পেশাগতগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, এমন খবর পেয়ে আমি উচিতারবিল পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছে তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। উচিতারবিলের সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে প্রভাবশালী এক নেতা সেখানে ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জমি দখল করেও তিনি মাছ চাষের একাধিক পুকুর তৈরি করেছেন।'
আক্রান্ত সাংবাদিক ছোটন কান্তি নাথ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকালের ঘটনায় আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।'
ঘটনাটি চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তীকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মৌখিকভাবে ঘটনাটি জেনেছি। সাংবাদিক ছোটনকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেসব মিথ্যা ও বানোয়াট। সেখানে গোলাগুলি হয়েছে ঠিকই, তবে আমার লোকজন কাউকে গুলি করেনি। সেসময় ঘটনাস্থলে আমার কোনো লোকজনই ছিল না। এটা আমার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা।'
বনবিভাগের জমি দখল করে ইটভাটা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমিতে পুকুর খননের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এসব অভিযোগের কোনোটিই সত্য নয়।'
Comments