বরগুনা

পতিত জমিতে লবণ-সহিষ্ণু গম চাষে সাফল্য

এখানকার কৃষি জমি বছরের প্রায় আট মাসই অনাবাদি থাকে। দেশের উপকূলীয় এলাকায় এ ধরনের জমির পরিমাণ প্রায় এক লাখ হেক্টর।
লবণ সহিষ্ণু গম
বরগুনার তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামে পতিত জমিতে লবণ-সহিষ্ণু গম চাষে সাফল্য পেয়েছেন চাষিরা। ২ মার্চ, ২০২৪। ছবি: সোহরাব হোসেন/ স্টার

বরগুনার তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামে পতিত জমিতে লবণ-সহিষ্ণু গম চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। ফলন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকরা।

নাম মাত্র খরচে গমের আবাদ করে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি গমের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়েও তারা ভূমিকা রাখছেন।

বরিশাল ও খুলনা বিভাগে কমপক্ষে এক লাখ হেক্টর জমিতে শীতে প্রায় তিন লাখ টন গম উৎপাদন সম্ভব। এর বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার ৪৪০ কোটি টাকা (৪৮ টাকা কেজি দরে) বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত শনিবার তালতলীর নলবুনিয়া গ্রামে আবাদ করা গম কাটার অনুষ্ঠানে কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত জমিতে গম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

স্থানীয় কৃষকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী হওয়ায় আবাদি জমিতে লবণের পরিমাণ খুব বেশি। এ কারণে শুধু আমন ধান চাষ হয়। ডিসেম্বরে আমন কাটার পর জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যায় বলে ফসল ফলানো যায় না। বর্ষা এলে আবার আমন চাষ করেন তারা। এখানকার কৃষি জমি বছরের প্রায় আট মাসই অনাবাদি থাকে। দেশের উপকূলীয় এলাকায় এ ধরনের জমির পরিমাণ প্রায় এক লাখ হেক্টর।

পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে অস্ট্রেলিয়া সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (এসিআইএআর) প্রকল্পের সহায়তায় বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, সিএসআইআরও, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ প্রকল্পের আওতায় গত ২০১৭ সাল থেকে গবেষণা করে আসছে। এ গবেষণার অধীনে তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামে ২০ কৃষক গম চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন।

কৃষকরা আমন ধান ওঠার আগেই জমি কিছুটা ভেজা থাকা অবস্থায় গম বীজ ছিটিয়ে দেন। জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার আগেই গম গাছ বেড়ে উঠে এবং এতে দুয়েকবার সেচ দিলেই ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে গম তোলা যায়।

লবণ সহিষ্ণু গম
বরগুনার তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামে লবণ-সহিষ্ণু গম কাটার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ২ মার্চ, ২০২৪। ছবি: সোহরাব হোসেন/ স্টার

গম চাষি ইউসুফ হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু আমন আবাদ করতে পারতাম। শুকনোকালে জমিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে অন্য ফসল ফলানো সম্ভব হয় না। গম আবাদের প্রকল্পের লোকজন আমাদের উৎপাদনের পদ্ধতি হাত-কলমে শিখিয়ে দেওয়ায় এ বছর এক বিঘা জমিতে গম চাষ করি। আশা করছি, আট থেকে ১০ মন গম পাবো।'

'নামমাত্র খরচে পতিত জমিতে গম উৎপাদন করতে পেরে খুশি,' যোগ করেন তিনি।

গম চাষি ইদ্রিস হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের জমি আমন আবাদের পর প্রায় আট মাস অনাবাদি থাকতো। এখন সেখানে গম চাষ করতে পেরে আমরা লাভবান হচ্ছি। আশা করছি, প্রতি মন গম প্রায় দুই হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রকল্প না থাকলেও আমরা এখন থেকে শীতে পতিত জমিতে গম চাষ করে লাভবান হতে পারবো।'

ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকায় জমির লবণাক্ততা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুকনো মৌসুমে এক লাখ হেক্টরেরও বেশি জমি অনাবাদি থাকছে।'

'প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং অস্ট্রেলিয়ার সিএসআইআরও যৌথভাবে গমের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গত পাঁচ বছর ধরে কাজ করছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'পটুয়াখালী, খুলনা ও সাতক্ষীরায় এ ফসলের প্রদর্শনী হয়েছে। এর মাধ্যমে উপকূলে আমন কাটার পর পতিত জমিতে কৃষকরা গম চাষ করতে পারবেন।'

ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগীর মতে, উপকূলে অনাবাদি জমিতে গম চাষ করা গেলে কমপক্ষে তিন লাখ টন গম উৎপাদন সম্ভব।

Comments

The Daily Star  | English

Why are investors leaving the stock market?

Stock investors in Bangladesh are leaving the share market as they are losing their hard-earned money because of the persisting fall of the indices driven by the prolonged economic crisis, the worsening health of the banking industry, and rising interest and exchange rates.

9h ago