মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম নিয়ে হতাশ পাবনার চাষিরা

বাজারে উঠেছে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ। চারা পেঁয়াজ বাজারে আসার আগে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে গত কয়েক বছর লাভ পেলেও এবার দাম কম হওয়ায় হতাশ দেশের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল পাবনার চাষিরা। এ অঞ্চলে এটি ‘মূলকাটা’ পেঁয়াজ হিসেবে পরিচিত।
পেঁয়াজের দাম
পাবনার সুজানগর উপজেলায় পেঁয়াজের বাজার। ছবি: সংগৃহীত

বাজারে উঠেছে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ। চারা পেঁয়াজ বাজারে আসার আগে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে গত কয়েক বছর লাভ পেলেও এবার দাম কম হওয়ায় হতাশ দেশের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল পাবনার চাষিরা। এ অঞ্চলে এটি 'মূলকাটা' পেঁয়াজ হিসেবে পরিচিত।

চলতি বছর প্রতিমণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা দরে। গত বছর এর দাম ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

চাষিরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর প্রতি বিঘায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়। ফলে বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৪২ হাজার টাকার।

এমন পরিস্থিতিতে তাদের বেশি দামে বীজ ও অন্যান্য সামগ্রী কিনে চারা পেঁয়াজ আবাদ করতে হচ্ছে।

পাবনার সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের পেয়াজ চাষি মো. কামরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করি। এর বড় অংশ মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এ বছর ২৫ বিঘা জমিতে চাষ করে প্রায় দেড় হাজার মণ পেঁয়াজ পেয়েছি। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ পেয়েছি বিঘাপ্রতি ৭০ মণ। এখন এর আশানুরূপ দাম পাচ্ছি না।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিমণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে ৪২ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।'

এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের স্বার্থে দেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি জানান তিনি।

সুজানগর উপজেলার উলাট গ্রামের কৃষক মো. মনটু খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর এই সময় এক মণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে। এবার এর দাম ৮০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা।'

পেঁয়াজের দাম
সুজানগরে পেঁয়াজের বাজার। ছবি: সংগৃহীত

চাষিদের ভাষ্য, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলেও এখনো পাবনার বাজারে পুরনো পেঁয়াজ রয়ে গেছে। নতুন পেঁয়াজের চাহিদা কম থাকায় কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না।

মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম নিয়ে যখন হতাশ পাবনার চাষিরা তখন চারা পেঁয়াজ আবাদ করতে তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

পেঁয়াজ চাষি মো. শহিদুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর ঘরে বীজ ছিল। এ বছর বীজ কিনতে হয়েছে।'

তিনি জানান, গত বছর এক কেজি বীজ ৫ হাজার টাকার মধ্যে কেনা গেলেও এ বছর স্থানীয় জাতের বীজ কিনতে হচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা কেজি দরে। হাইব্রিড পেঁয়াজের বীজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকার বেশি।

তার মতে, এতো টাকা দিয়ে বীজ কিনে পেঁয়াজ চাষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। বীজের চড়া দামের পাশাপাশি সেচ, সার, কীটনাশকের দামও বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর পেঁয়াজ চাষের খরচ বিঘাপ্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি হচ্ছে।

তাই অতিরিক্ত খরচ করে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চাষিরা।

নতুন পেঁয়াজের আশানুরূপ দাম না পাওয়া কিংবা উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যপূরণ নিয়ে কোনো সংশয় তৈরি হবে না বলে ডেইলি স্টারকে জানান পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. সাইফুল আলম।

গত কয়েক বছর ধরে দেশে পেঁয়াজের আবাদ বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এ বছরও তাই হবে। পেঁয়াজ আবাদ করে কৃষক লাভবান হবেন।'

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পাবনায় ৮ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১ দশমিক শূন্য ৭ লাখ টন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুড়িকাটা পেঁয়াজ কাটা শুরু হয়েছে। চলবে জানুয়ারি পর্যন্ত। কৃষকের ঘরে প্রায় ১৫ শতাংশ পুরনো পেঁয়াজ থাকায় বাজারে পুরনো পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।'

মুড়িকাটা পেঁয়াজ ঘরে তোলার পাশাপাশি কৃষকরা চারা পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এ বছর পাবনায় ৪৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে ৬ দশমিক ৯০ লাখ মেট্রিক টন চারা পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

পাবনার সুজানগর উপজেলায় পেঁয়াজের বাজার। ছবি: সংগৃহীত

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago