শিবচরে দুর্ঘটনা

পড়ার খরচ চালাতে সুপারভাইজারের কাজ নেন মিনহাজুর

মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরের শিবচরে সড়ক দুর্ঘটনার পর ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে দুজন ছিলেন মৃত। বাকি ৮ জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মৃত দুজন হলেন, গোপালগঞ্জের মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস (২০) এবং বাগেরহাটের শেখ আকাব্বর (৬৫)। মিনহাজুর ছিলেন ওই বাসের সুপারভাইজার এবং আকাব্বর ছিলেন যাত্রী। তাদের মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

ইমাদ পরিবহনের অপর এক বাসের সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিনহাজুর গোপালগঞ্জের একটি কলেজে পড়তো। বাবা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। তারা ২ ভাই ও এক বোন। বড় ভাইয়ের সামান্য ইনকামে সংসার চলতো না। তাই সে পড়ার খরচ চালাতে ইমাদ পরিবহনে সুপারভাইজারের কাজ নেয়। সে ট্রিপ-বাই-ট্রিপ চুক্তিতে কাজ করতো। প্রতি ট্রিপে হাজিরা পেত ৬০০ টাকা। মাসে ১৫-১৮টি ট্রিপে যেতে পারতো।'

'গতকাল রাত ৮টায় মিনহাজুর গোপালগঞ্জ থেকে ট্রিপ ধরার জন্য খুলনা যায়। আবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটে তার বাস খুলনা ছাড়ে। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে। আমাদের বাসটি এর পেছনে ছিল। আমরা প্রায় ২০ মিনিট পর দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। বাসের কাছে গিয়ে দেখি চালক জাহিদুল ইসলাম ও হেলপার মারা গেছেন। চালকের দেহ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছিল', বলেন তিনি।

সাইফুল ইসলাম বলেন, 'সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল, এ ছাড়া আর কোনো সমস্যা ছিল না। বাসটি ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনায় পড়েছে বলতে পারব না।'

ইমাদ পরিবহনের মোট ৮১টি বাস রয়েছে এবং সেগুলো ঢাকা (গুলিস্তান)-খুলনায় চলাচল করে বলেও জানান তিনি।

হাসপাতাল থেকে মিনহাজুরের চাচা হেদায়েত উল্লাহ বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিনহাজুরের পড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। কাজ করে পড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্বও সে কাঁধে তুলে নিয়েছিল। কিন্তু কিছুই আর হলো না, সব শেষ।'

শেখ আকাব্বর। ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক শেখ আকাব্বর চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ঢাকার খিলক্ষেতে আসছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ের জামাই জাহাঙ্গীর হোসেন। বাস দুর্ঘটনায় শেখ আকাব্বর মারা গেছেন। আহত জামাই জাহাঙ্গীর হোসেন বর্তমানে শিবচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতাল থেকে শেখ আকাব্বরের আরেক মেয়ের জামাই তরিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার শ্বশুরের ৭ মেয়ে, কোনো ছেলে নেই। ২০১৩ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। এক সপ্তাহ আগে তিনি জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়িতে যান। আজ ইমাদ পরিবহনের বাসে করে জাহাঙ্গীর হোসেন তাকে নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন।'

আহত ঝুমা বেগম। ছবি: স্টার

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ঝুমা বেগম (৩৫)। বর্তমানে তিনি ঢামেকে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতালে কথা হয় ঝুমা বেগমের স্বামীর মামাতো ভাই কাজী রিপন বিল্লাহর সঙ্গে। 

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঝুমা বেগমের স্বামী সৌদিপ্রবাসী। তাদের ৩ মেয়ে ও এক ছেলে। শাশুড়ি ও সন্তানদের নিয়ে হজে যাওয়ার কথা ছিল ঝুমার। সেজন্য ভিসার কাগজপত্র নিতে দেবর সজিবুর রহমানের সঙ্গে ঢাকায় আসছিলেন তিনি। দুর্ঘটনায় সজিবুর মারা গেছেন। তবে ঝুমার অবস্থা অনেক খারাপ বলে বিষয়টি তাকে এখনো জানানো হয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English

Iran, Israel launch new attacks after Tehran rules out nuclear talks

Israel's war with Iran entered its second week on Friday with the Israeli military chief warning of a "prolonged campaign"

4h ago