ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সিএএর বিরুদ্ধে করা ২৩৭ মামলার শুনানি শুরু

সিএএ নিয়ে প্রতিবাদ। ছবি: সুব্রত গোস্বামী/ডয়চে ভেলে
সিএএ নিয়ে প্রতিবাদ। ছবি: সুব্রত গোস্বামী/ডয়চে ভেলে

সম্প্রতি ভারতে কার্যকর হয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ। যা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইনটিকে অসাংবিধানিক বলে অভিযোগ করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টে এই আইনের বিরুদ্ধে ২৩৭টি মামলা জমা পড়ছে। এই সবকটি মামলা নিয়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার শুনানি শুরু হয়েছে।

মামলাকারীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নাম বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, সিপিএম এর যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, কেরালার একটি রাজনৈতিক সংগঠন, এমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি।

প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে যে বেঞ্চ এই মামলা শুনবে, তাতে আছেন বিচারপতি জেবি পারড়িওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র।

প্রত্যেক মামলাকারীই এই আইনটিকে অসাংবিধানিক বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের বক্তব্য, এখানে ধর্মীয় নিরপেক্ষতার বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে।

বস্তুত, ২০১৯ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলটি সংসদে পাশ হয়েছিল। এতদিন পর তা কার্যকর করা হয়েছে। মামলাকারীদের দাবি, লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য এই আইনটি কার্যকর করা হয়েছে। গত প্রায় চার বছর তা ফেলে রাখা হয়েছিল।

২০১৯ সালে পার্লামেন্টে বিলটি পাশ হওয়ার পরেই সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে একাধিক মামলা হয়েছিল। সে সময়য় সাবেক কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী কপিল সিবল সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, আইনটিকে বাতিল করা হোক। কিন্তু আদালত জানিয়েছিল, যেহেতু নোটিফিকেশন জারি হয়নি, অর্থাৎ, আইনটি কার্যকর করা হয়নি। যার ফলে আদালত মামলাটি গ্রহণ করতে পারবে না। এখন আইন কার্যকর হওয়ার পর আদালত তা নিয়ে শুনানিতে সম্মত হয়েছে।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসিক এবং খ্রিস্টানরা ভারতে এসে নাগরিকত্ব চাইলে তাদের তা দেয়া হবে। কীভাবে সেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানানো হবে, তা স্পষ্ট করা হয়েছে আইনে।

বস্তুত, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর নামও উল্লেখ করা হয়েছে আইনে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে।

প্রশ্ন উঠেছে, ধর্ম উল্লেখ করে এভাবে আদৌ কোনো আইন তৈরি করা যায় কি না। কারণ ভারতীয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটির উল্লেখ আছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে সেখানকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এসে যাতে ভারতে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন, সে জন্যই এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, 'সিএএ নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন, নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার আইন নয়। এর প্রভাব দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর পড়বে না।'

সিএএ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং বাম আন্দোলনের কর্মী সুমন সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন,' এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, সিএএ কার্যকর হওয়ার পর দেশজুড়ে এনআরসি হবে। সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমরা আক্রান্ত হবেন। তাছাড়া ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ধর্মীয় গোষ্ঠীর উল্লেখ করে কোনো আইন তৈরি করা সংবিধানবিরোধী।'

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

মার্কিন সিনেটর বেন কার্ডিন। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন সিনেটর বেন কার্ডিন। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন সিনেটর ও সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান বেন কার্ডিন বলেছেন, 'এই আইনের প্রভাব ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ওপর পড়তে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ কিছু মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমরা মনে করি, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য রাখা যাবে না। সকলকে সমান অধিকার দিতে হবে। কিন্তু ভারতের এই আইন বৈষম্যমূলক। সেখানে নির্দিষ্ট কিছু ধর্মের উল্লেখ করা হয়েছে। যা যথেষ্ট চিন্তার এবং উদ্বেগের।'

Comments

The Daily Star  | English

Advisory council set to hold emergency meeting this evening

Sources from the CA office confirmed that the meeting will take place at the State Guest House, Jamuna

15m ago