আর ৫ মিটার খুঁড়লেই পৌঁছানো যাবে ১৭ দিন সুড়ঙ্গে আটকা ৪১ শ্রমিকের কাছে

রাতভর র‍্যাট হোল মাইনিং এ উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। ছবি: রয়টার্স
রাতভর র‍্যাট হোল মাইনিং এ উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। ছবি: রয়টার্স

ভারতের উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশীর নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার কার্যক্রমে অবশেষে ইতিবাচক সংবাদ পাওয়া গেছে। ম্যানুয়াল মাইনিং প্রক্রিয়ায় আর পাঁচ মিটার খুঁড়লেই আটকে পড়া ৪১ শ্রমিকের কাছে পৌঁছাবেন উদ্ধারকর্মীরা।

আজ মঙ্গলবার ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এই তথ্য জানিয়েছে।

১২ নভেম্বর উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশী জেলার একটি জাতীয় মহাসড়কে নির্মাণাধীন এই সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে পড়ে। সুড়ঙ্গটির উচ্চতা সাড়ে আট মিটার এবং এটি প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রায় ১৭ দিন ধরে সেখানে ৪১ জন শ্রমিক আটকে আছেন।

উত্তরাখন্ডের মূখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, 'শ্রমিকদের বের হয়ে যাওয়ার পথটি সুড়ঙ্গের ৫২ মিটার ভেতর পর্যন্ত প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এটি ৫৭ মিটারে যেয়ে শেষ হবে। আমরা আশা করছি খুব শিগগির উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হবে।'

রয়টার্সকে দিপক পাতিল নামের এক উদ্ধার কর্মকর্তা জানান, 'আর মাত্র ৬ থেকে ৭ মিটার (খনন) বাকি।'

তিনি আরও জানান, ৬০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত পাথর সরানর উদ্দেশ্য নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছিলেন। ইতোমধ্যে ৫০ মিটারেরও বেশি জায়গার পাথর সরানো হয়েছে।

১৭ দিন ধরে চলছে উদ্ধার কার্যক্রম। ছবি: রয়টার্স
১৭ দিন ধরে চলছে উদ্ধার কার্যক্রম। ছবি: রয়টার্স

গতকাল থেকে যন্ত্রের পরিবর্তে কায়িক শ্রম নির্ভর 'ম্যানুয়াল ড্রিলিং' শুরু হয়েছে।

'র‍্যাট হোল মাইনিং' নামে পরিচিত এই প্রক্রিয়াটি শুরু করে ২৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি অপ্রশস্ত পথ তৈরি করা।

সাধারণত কয়লার খনি থেকে অপ্রশস্ত সুড়ঙ্গ খুঁড়ে কয়লা খনন করার কাজে র‍্যাট হোল (ইঁদুরের গর্ত) মাইনিং ব্যবহার করা হয়। গর্তগুলো এতো ছোট থাকে যে কোনোমতে একজন খননকারী সেখানে ঢুকতে পারেন। এ কারণেই এর নাম 'ইঁদুরের' গর্ত।

উত্তরাখন্ডের সুড়ঙ্গে ভাঙা পাথর সরিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনার জন্য নিরাপদ একটি পথ তৈরি করছেন র‍্যাট হোল মাইনাররা।

শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা অগার মেশিন দিয়ে ড্রিলিংয়ের কাজ শুরু হলেও এটি খুব শিগগির বিকল হয়। যার ফলে গতকাল সোমবার থেকে ম্যানুয়াল ড্রিলিং শুরু হয়। এ ছাড়াও, সুড়ঙ্গের ওপর থেকে ৮৬ মিটার গর্ত খোঁড়ার কাজও শুরু হয়, যাকে বলা হচ্ছে 'ভার্টিকাল ড্রিলিং'। এই বিকল্প প্রক্রিয়ার কাজের ৪০ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। 

আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য আহমেদাবাদের এক মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। ছবি: রয়টার্স
আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য আহমেদাবাদের এক মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। ছবি: রয়টার্স

সোমবার সন্ধ্যায় অগার মেশিনের ভাঙা অংশ সুড়ঙ্গপথ থেকে বের করে ফেলা হয়েছে।  শ্রমিকদের বের করে আনার জন্য যে পথটি তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে এখন স্টিলের পাইপ প্রবেশ করানো যাবে। অগার মেশিনটি মেরামত করার পর এটি একটি ৮০০ মিলিমিটার পাইপ এই আংশিকভাবে নির্মিত পথে প্রবেশ করাবে। পাশাপাশি চলতে থাকবে ম্যানুয়াল ড্রিলিং প্রক্রিয়া।

উদ্ধারকর্মীরা জানান, শ্রমিকরা এর আগে ৬০০ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের পাইপের ভেতর কাজ করেছে, যার ফলে তারা খুব সহজেই এই ৮০০ মিলিমিটার পাইপ দিয়ে বের হয়ে আসতে পারবে। তবে তাদের নিরাপত্তার জন্য একটি হেলমেট, বিশেষ ইউনিফর্ম, মাস্ক ও চশমা সরবরাহ করা হবে।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) পক্ষ থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সৈয়দ আতা হাসনাইন জানান, ভার্টিকাল ড্রিলিং প্রক্রিয়ায় ৩৬ মিটারের গর্ত খোঁড়া হয়েছে।

বৃষ্টির পূর্বাভাস ও দিনের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ায় উদ্ধার কার্যক্রম আরও জটিল হয়েছে।

নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গের দুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি জায়গায় এই ৪১ কর্মী আটকে আছেন। সেখানে পাইপের মাধ্যমে একটি ল্যান্ডফোন বসানো হয়েছে, যাতে তারা বাইরের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

দিনে দুইবার একদল চিকিৎসাকর্মী সুড়ঙ্গপথের সামনে এসে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল বলেন, 'উদ্ধার কার্যক্রমে আমাদেরকে অনেক সতর্ক থাকতে হচ্ছে। প্রকৃতি আমাদের জন্য অনেক বাঁধার সৃষ্টি করছে। কিন্তু আমরা আমাদের সংকল্পে অটুট। আমরা ঘড়ির কাঁটা ধরে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। শ্রমিকদের দ্রুত ও নিরাপদে বের করে আনার জন্য আমাদেরকে প্রার্থনা চালিয়ে যেতে হবে।'

অস্ট্রেলীয় সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্সের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী মোদির মুখ্য সচিব পিকে মিশ্র। ছবি: রয়টার্স
অস্ট্রেলীয় সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্সের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী মোদির মুখ্য সচিব পিকে মিশ্র। ছবি: রয়টার্স

প্রধানমন্ত্রী মোদির মুখ্য সচিব পিকে মিশ্র গতকাল সোমবার ঘটনাস্থলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে উদ্ধারকার্যক্রম নিরীক্ষা করেন। তার সঙ্গে ছিলেন উত্তরাখন্ডের মুখ্য সচিব সুখবির সিং সাধু। পিকে মিশরা উদ্ধারকর্মীদের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

উত্তরকাশি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত সিলকিয়ারা সুড়ঙ্গটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চাভিলাষী চারধাম মহাসড়ক প্রকল্পের অংশ। দেরাদুন থেকে এখানে গাড়িতে করে যেতে সাত ঘণ্টা সময় লাগে।

১৫০ কোটি ডলারের এই প্রকল্পে ভারতে হিন্দুদের চার তীর্থস্থানকে ৮৯০ কিলোমিটার সড়কের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus calls for united action to tackle climate crisis

Focuses on youth potential for green growth and sustainability

1h ago